জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সব অর্থেই সমার্থক। এমনকি শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ- দুটি নামই পাকিস্তান সৃষ্টির পর এগিয়েছে পরস্পরের হাত ধরে, নানা উত্থান, নানা সংগ্রামশেষে পরিণতিও পেয়েছে একইসঙ্গে। ফলে ‘বাংলাদেশ’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস যেমন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, তেমনি বঙ্গবন্ধুর জীবনের সঙ্গে যুক্ত বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার ইতিহাসও। বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করতে করতেই বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ে ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে। ছাত্রজীবন থেকে গণমানুষের কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা এবং বাঙালির স্বাধিকার অর্জনে জীবনব্যাপী নিপীড়ন-অত্যাচার ও নানা বাধানিষেধ সত্ত্বেও অব্যাহত সম্পৃক্ততা তাঁকে ধীরে ধীরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সাধারণ শেখ মুজিব থেকে রূপান্তরিত করে তোলে গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতায়। শেখ মুজিব থেকে তাই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার ইতিহাসও সুদীর্ঘ ও অবিচ্ছেদ্য। আর, এ কারণেই বঙ্গবন্ধুর জীবনকথা শুধুমাত্র তাঁর জীবনকথা নয়, বাঙালি জাতির দীর্ঘকালের শোষণ-বঞ্চনা ও তাদের স্বাধিকার অর্জনের বহুবর্ণিল কাহিনীও। বিস্ময়ের এটাই, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও, এমনকি বাঙালির মুক্তির এই মহানায়ককে নিয়ে হাজার হাজার গ্রন্থ লেখা হলেও তাঁকে নিয়ে সম্পূর্ণ একটি আকরগ্রন্থের অভাব রয়েই গেছে, যে গ্রন্থে মিলবে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন, তাঁর কর্ম, আদর্শ ও আত্মত্যাগ তাঁর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, একইসঙ্গে মিলবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির ইতিহাস এবং এ সংক্রান্ত সঠিক তথ্য-উপাত্ত ও ঐতিহাসিক আলোকচিত।
প্রায় ১০০ জন গবেষকের দু’বছরের নিবিড় গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইয়ের পর এই মহাগ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে ৫৯১ ভুক্তি এবং প্রায় ৭৫০টি ঐতিহাসিক আলোকচিত ও মনোগ্রাম। একই সঙ্গে সম্ভবত এটিই বাংলাদেশের একমাত্র গ্রন্থ যেখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে আলোকচিত্রের সঙ্গে দেয়া হয়েছে আলোকচিত্রশিল্পীদের নামও। নিবিড় গবেষণার পর ‘মুজিবপিডিয়া’য় যুক্ত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ভুক্তিতে উল্লেখকৃত সময়কালেরই আলোকচিত।
সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর পরিবার সংক্রান্ত ভুক্তিগুলো সম্পাদনা ও সংশোধন করে দিয়েছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবনের পাশাপাশি এই জ্ঞানকোষে আছে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ সকল রাজনৈতিক ঘটনা, ইতিহাসের অপরাপর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি ইতিহাসের খলনায়কদের কর্মকাণ্ডের বিবরণও।
‘মুজিবপিডিয়া’ নামের এই মহাগ্রন্থ তাই কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে রচিত এ উপমহাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকোষ বা এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
কামাল চৌধুরী
ফরিদ কবির
ফরিদ কবির প্রচলিত কবিতা রচনার মাধ্যমে যাত্রা করলেও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হৃদপিণ্ডে রক্তপাত’ প্রকাশের পরই আমূল পাল্টে ফেলেন নিজের কবিতার ভাষা ও প্রকরণ। যে কারণে পরবর্তীকালে; তাঁর কবিতা আর থাকেনি প্রচল-অনুসারী, ক্রমাগত নিরীক্ষায় তিনি বাংলা কবিতাকে নিয়ে যান এক নতুন গন্তব্যের দিকে, যে কবিতার ভাষা একান্ত তাঁরই। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি প্রায় একাই বাংলা কবিতাশরীরে যোগ করেন নতুন ডিকশন। প্রচলিত ও প্রথা-কবিতার বদলে কবিতার জন্য সৃষ্টি করেন নতুন রাস্তা। যে-কোনো রচনায় বরাবর প্রথাবিরোধী এই কবি-লেখকের জন্ম ঢাকায়, ১৯৫৯ সালের ২২ জানুয়ারিতে। বড় হয়েছেন পুরোনো ঢাকার জিন্দাবাহারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ফরিদ কবির মাস্টার্সে পড়লেও পরীক্ষা দেননি। মুদ্রণ ব্যবসা দিয়ে জীবিকা শুরু করলেও পেশা বদল করেছেন বারবার। মুদ্রণ ব্যবসা ছেড়ে চাকরি করেছেন ব্যাংকে, সেটা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন সাংবাদিকতায়; কাজ করেছেন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও আমাদের সময়-এ। আর, এখন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিতে। এ ছাড়াও, তিনি সম্পাদনা করেছেন মাসিক ‘নতুনধারা’ ও সাপ্তাহিক ‘কাগজ’। ফরিদ কবির-এর অন্যান্য বই কবিতা হৃদপিণ্ডে রক্তপাত [মুক্তধারা ১৯৮৫], ওড়ে ঘুম ওড়ে গাঙচিল [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৮], অনন্ত দরোজাগুচ্ছ [অনন্যা ১৯৯১], মন্ত্র [অন্যপ্রকাশ ১৯৯৯], ওঁ প্রকৃতি ওঁ প্রেম [ আগামী ২০১০], ফরিদ কবিরের নির্বাচিত কবিতা [অন্যপ্রকাশ ২০০৩, অঙ্কুর ২০০৭], প্রেমের কবিতা [বিদ্যাপ্রকাশ ২০০৯], আমার কবিতা [অনন্যা, ২০১২] প্রবন্ধ পুরোনো ও নতুন কবিতা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ [অন্যপ্রকাশ ২০০৩] সম্পাদনা নির্বাচিত কবিতা [সিনোরিনা ১৯৮৪] ,পঞ্চাশ বছরের প্রেমের কবিতা [মুক্তধারা ১৯৮৬], কবিদের লেখা প্রেমের গল্প [কাকলী ১৯৮৭, অন্যপ্রকাশ ১৯৯৯], দুই বাংলার কবিতা [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৭], একুশের কবিতা [অনন্যা ১৯৯১], একুশের গল্প [অনন্যা ১৯৯১], হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ [অনুপম প্রকাশনী ১৯৯২], দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ গল্প [শিখা প্রকাশনী ১৯৯২], স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি [মাওলা ব্রাদার্স ১৯৯৪], দুই বাংলার ৫০ বছরের প্রেমের কবিতা [অন্যপ্রকাশ ১৯৯৮] অনুবাদ বাংলাদেশ : একটি রক্তাক্ত দলিল [বন্ধু ১৯৮৭, হাওলাদার প্রকাশনী, ২০১৫], মুক্তিযদ্ধের ঘাতক [পল্লব পাবলিশার্স ১৯৮৯] নিবন্ধ স্বাস্থ্যসেবা ও নৈতিকতা [আবিষ্কার, ২০১৩], (অধ্যাপক এ কে আজাদ খান-এর সঙ্গে যৌথভাবে)