বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিশাল ও বিস্তীর্ণ। ১৯০৫ সালের ঐতিহাসিক বঙ্গবঙ্গ, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ভারত বিভক্তি, পাকিস্তান নামক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের সৃষ্টি, ছাত্র আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান ইত্যাদি রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই বাংলা ভূখণ্ডের মানুষ তথা বাঙালি জাতি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিল, তারই বিশদ বিবরণ এই গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে।
পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বৈষম্যসহ নানা ঐতিহাসিক ঘটনা নতুন প্রজন্মের পাঠকের কাছে অজানা দিকের দুয়ার খুলে দেবে। যেমন: দুই বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এই গ্রন্থে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের প্রসঙ্গটি এই গ্রন্থে বিশেষভাবে তুলে আনা হয়েছে। এই গ্রন্থ থেকে পাঠক তথা নতুন প্রজন্মের সন্তানরা তথ্য সমৃদ্ধ এবং মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতা লাভ করবে। মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্যতা, বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা নানা আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস; এক কোটি শরণার্থীর ভারতে আশ্রয় নেওয়া, তাদের কঠিন জীবনসংগ্রাম; মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ; দেশের অভ্যন্তরে থাকা বুদ্ধিজীবী সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভূমিকা, বাংলা ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন কেমন ছিল, সে কথা এই গ্রন্থে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান আসাদ একজন অনুসন্ধানী ও গবেষণামনস্ক লেখক হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষ করে তার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থগুলো স্বজাত্যবোধের পরিচয়বাহী। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, পাকিস্তানি উপনিবেশবাদ, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ব্যাপক গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রচিত তার এই মুক্তিযুদ্ধসমগ্র ॥ ২ গ্রন্থটি পাঠককে নিয়ে যাবে ইতিহাসের ঐতিহাসিক পশ্চাদ্পটে।
আসাদুজ্জামান আসাদ
ইতিহাস রচনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আসাদুজ্জামান আসাদ পাঠক মহলে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। উপমহাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তার লেখালেখির প্রধান বিষয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। জন্ম ১৯৬০ সালে নড়াইলে। বাবা আলী আহম্মেদ ভূঁইয়া, মা রিজিয়া বেগম। তিন বছর বয়সে পিতৃহীন। শৈশব ও কৈশাের কেটেছে লােহাগড়া থানার সারােল ও তালবাড়িয়া গ্রামে। যৌবনের শীর্ষ সময় থেকেছেন যশাের শহরে। লেখালেখি করছেন চার দশক ধরে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ জীবনের প্রধান ঘটনা। চিন্তায় ও মননে লালন করেন গ্রামীণ লােকজ সংস্কৃতি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসমাপ্ত। কর্মজীবন ব্যাপক বৈচিত্র্যময়। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান। অপছন্দ কৃত্রিম অহমিকা, উগ্র আধুনিকতা, শহুরে জীবন। দেশপ্রেম প্রধান আদর্শ। ঘৃণা করেন রাজনীতিকদের দলবদল। শ্রদ্ধা করেন মুক্তিযােদ্ধাদের। প্রিয় ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু , নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও এস, এম. সুলতান। প্রাচীন বাংলা গান ও মঞ্চ নাটকের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। রবীন্দ্রনাথের গান আর জীবনানন্দের কবিতায় নিজেকে খুঁজে পান। নজরুলের রচনায় উদ্দীপ্ত হন। হারিয়ে যাওয়া দিন আর পাহাড়ের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বলতা। প্রিয় ঋতু বর্ষা। শখ রিকশায় ঘােরা ও কলম কেনা। প্রিয় অনুভূতি শীতের প্রারম্ভে আর বসন্তের আগমনে। সহ্য করতে পারেন না অবজ্ঞা ও অবহেলা। শ্রেষ্ঠ সম্পদ বাল্যকালের স্মৃতি। প্রিয় খেলা ফুটবল। ভালােবাসেন শিমুল, বকুল, অশােক আর কদম ফুল । প্রিয় খাবার পান্তা ও ঝালমুড়ি। সংসার-জীবনকে ভাবেন অন্যরকম বন্দিশালা। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন না। থাকতে চান নিভৃতে, একাকী।