এ বইয়ে লেখক যে-মূর্তি ভাঙতে চেয়েছেন, তা মাটি বা পাথরের তৈরি প্রতিমা নয়। বরং এ মূর্তি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মগজে লালিত বিভিন্ন অপধারণা। সম্প্রতি এক ঘটনায় মহিউদ্দিন মোহাম্মদ মন্তব্য করেছেন:
“পড়া তিন প্রকার। রিডিং, মিসরিডিং, ও ইল-রিডিং। রিডিং মানে স্বাভাবিক পাঠ। লেখক যা বলতে চেয়েছেন, তা অবিকল সেই অর্থে অনুধাবন করা। মিসরিডিং হলো ভুল পাঠ, যেখানে পাঠক অথবা লেখক, যেকোনো একজনের, অথবা উভয় জনের, ভাষা ও বুদ্ধির সীমাবদ্ধতার কারণে ভুলভাবে কোনো লেখার পাঠোদ্ধার হয়। কিন্তু ইল-রিডিং হলো কূটপাঠ, যেখানে পাঠক ভালোভাবেই জানেন লেখক কী বলতে চেয়েছেন, তবুও নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে লেখাটির ভুল অর্থ সমাজে প্রচার করেন। মানুষকে ইল-রিডার বা কূটপাঠক হতে সাবধান থাকতে হবে।”
এ বইটি পড়ার সময় মিসরিডিং ঘটতে পারে। কেউ কেউ ঘটাতে পারেন ইল-রিডিং। সম্মানিত পাঠকগণ এ বিষয়ে সতর্ক থাকলে ভালো হয়। কারণ বইটিতে বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলা হয়েছে।
‘কর্ণফুলীর গান’ নামে যে-অংশটি আছে, সেটি অনেকগুলো এফোরিজমের সমষ্টি। প্রতিটি এফোরিজম মানুষ ও সমাজের বিভিন্ন অসুখের দিকে ইঙ্গিত করেছে। কোনো কোনোটি আঘাত করেছে চিরায়ত নানা প্রথা ও নিয়মকে। ‘লোকের জঙ্গল’ রচনায় বিদ্রুপ করা হয়েছে প্রতিভাবান মানুষদের প্রতি প্রতিভাহীন ও মিডিওকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গীকে। এটি অত্যন্ত উইটি ও উপভোগ্য রচনা। ‘দর্শন কী?’ অধ্যায়ে সাধারণ পাঠকের কাছে দর্শন বিষয়টির একটি প্রাঞ্জল পরিচয় উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজে দর্শন ও দার্শনিক সম্পর্কে যেসব বিভ্রান্তিকর ধারণা বিস্তার লাভ করেছে, সেগুলোর প্রতি এ রচনাটি গুরুতর হুমকি। লেখকের দার্শনিক রচনাবলী পড়ার আগে ‘দর্শন কী?’ পড়া অপরিহার্য।
‘পশু নয়, ফলমূল’ অধ্যায়টি বৈপ্লবিক। এ অধ্যায়ে লেখক দেখিয়েছেন, কোরবানি আদায়ের জন্য পশু জবাই অপরিহার্য নয়। পশুর বদলে ফলমূল দিয়েও কোরবানি আদায় করা যায়। কোরবানির ধর্মীয়, রাজনীতিক, ও অর্থনীতিক দিকের পাশাপাশি তিনি এর দার্শনিক দিক নিয়েও আলোচনা করেছেন।
মহিউদ্দিন মোহাম্মদের লেখাকে নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। যারা জানেন, তারা জানেনই। তাঁর বহুল আলোচিত ‘আধুনিক গরু-রচনা সমগ্র’, ‘ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠো রে’, ‘টয়োটা করোলা’— এসব বইয়ের তীরমাখা লেখা ও গল্প চিন্তাশীল পাঠক সমাজে সর্বজনবিদিত।