নিঃশব্দ উপন্যাসটি তেমনই কিছু গল্পের গাঁথুনি। ধীরে ধীরে শেলাই বুণে চিত্রপট তৈরি করেছি উপন্যাসটিতে। দীর্ঘ এই উপন্যাসের শুরুটা আমাকে শেষ এমনকি মাঝখানটা নিয়েও ভাবাতে পারেনি, আমি লিখে চলেছিলাম ওই সব জীবনের গল্প যা সমাজে আজও জীবন্ত। সামাজিক চেতনার বাইরে আঞ্চলিক এমনকি আন্তর্জাতিক সীমানা পার করে জাতিসত্ত্বার কথা তুলে ধরেছে। গল্পে আশির দশকের শেষের দিকের চরিত্রগুলো কথা বলেছে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত অথবা স্বেচ্ছা নির্বাসিত মানুষের সম্পর্কে একই ভাবে প্রকাশ করেছে ফিরে আসার আকুতিও। ভাষা দেশাত্মবোধ ও ভাষা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবিস্কার করেছি নিষ্পাপ এক শিশুকে, বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে ফুটফুটে শিশুটি যখন কথা বলার শক্তি হারায় তখন তার পাশে বাবা নেই, বেশ আগে হারিয়ে গিয়েছিল মা। এরপরে একে একে ভালবাসার সবাই। আমি বিস্ময়ে ভাবি, কি হচ্ছে লেখাটা? শেষ পর্যন্ত কী দাড়াতে পারে গল্পটা। আমি জানতামনা ছোট শিশুর চরিত্রটিই অবশেষে নাম হয়ে শোভা পাবে বইটির মলাটে। নিঃশব্দ উপন্যাসটির সাথে চরম ভাবে অবিচার করে চলেছিলাম প্রায়। দৃশ্যপটগুলোর আনকোরা ভাবনা থেকে আমি ছুটে গিয়েছিলাম উল্যেক্ষিত স্থানগুলোতে। গোপালগঞ্জ, খুলনা, সীমান্তঘেরা সাতক্ষীরা, ইছামতী নদী ও পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার, বারাসাত, বসিরহাট, হাসনাবাদের বেশ কয়েকটি গ্রামে। নব্বইয়ের শুরুর দিকের সাথে বর্তমান অবস্থান মেলানো কতটা দুরহ ছিল তা হয়ত এই পথে না হাটলে বুঝতে পারতাম না। নিঃশব্দ কথা বলেছে আঞ্চলিকতার বাইরে গিয়েও পারিবারিক দায়িত্ববোধ ও সমাজচিত্রের গভীরের কথা। নিঃশব্দ বেড়ে ওঠে জীবনের প্রয়োজনে বেঁচে থাকা শেখাতে। কে জানে এমন হাজারো নিঃশব্দ ছড়িয়ে আছে আমাদের সমাজে, যার বা চোখের কোণ বেয়ে অঝরে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধাঁরা।
সাইফুদ্দিন রাজিব
শৈশব ও কৈশােরকাল কেটেছে মধুমতি নদীর তীর-ঘেঁষা পূণ্যভূমি টুংগীপাড়ায়। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কবি আবুল হাসানের মতাে গুণী ব্যক্তিত্বদের উপজেলার মাটির ঘ্রাণে স্বপ্ন বাঁধেন মানুষ হওয়ার—একজন সমৃদ্ধ সাহিত্যের মানুষ। তিনি গল্প বলতে ভালােবাসেন, মাটির গল্প, মানব পটের গল্প। গল্প করেন প্রেম, দ্রোহের বাইরেও সমাজের গল্প, সম্প্রীতির গল্প। বিশ্ব নাগরিক হিসাবে তিনি স্বপ্ন দেখেন সম্প্রীতির চেতনার কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাসাহিত্য ছড়িয়ে পড়ক বিশ্বজুড়ে। কবি ও কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আদর্শিক ছেলেটি ছুটতে ভালােবাসেন নানা দেশে, নানা সংস্কৃতিতে। ঘুরে বেড়িয়েছেন দক্ষিণ ভারতের অলিতে গলিতে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে রয়েছে তার গভীর যােগ। চিত্রশিল্পের গভীরতায় ডুব দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেন কাহিনির দৃশ্যপট।