প্রসঙ্গ-কথা প্রায় তিরিশ বছর জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা চারটি গল্প এই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত হল। নিয়মিতভাবে লিলে চললে লেখায় যে সাবলীলতা দেখা দেয় বা লেখার আলাদা কলকজার ওপর যে সহজ অধিকার আসে, তার অনটন গল্পগুলোয় স্পষ্ট। তা ছাড়া, প্রায় প্রতিটি লেখাই কয়েক বছর ধরে কয়েকবারের আলাদা চেষ্টায় লেখা বলে অনেক কষ্ট করেও গল্পশরীর থেকে আড়ষ্টতার চিহ্ন মুছে দেওয়া গেল না। ‘রোদনরূপসী’ গল্পটি বাংলাদেশের ‘ষাটদশকী অস্তিত্ববাদ’ থেকে জেগে ওঠা। গল্পটিকে ঐ চোখে দেখলে সুবিচার হবে। বইটি প্রকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে আহমাদ মাযহার, রবিশঙ্কর মৈত্রী, মাসুদুর রহমান খোকন ও সালাহউদ্দিন বাবলুর সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। যার নিষ্কৃতিহীন তাড়নায় বইটি প্রকাশিত না হয়ে পারল না তিনি এই বইয়ের প্রকাশক কে. এম. লিয়াকত। তঁার প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপনা করেছেন তিনি তিরিশ বছর-১৯৬২ সাল থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত । অধ্যাপক হিশেবে তার খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে সাহিত্য পত্রিকা 'কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বহমান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী, রুচিমান ও বিনোেদন-সক্ষম ব্যক্তিত্ব হিশেবে আবির্ভূত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনােদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। এইসব ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাহিত্যচর্চায় নিবিষ্ট। কবিতা, প্রবন্ধ, ছােটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জর্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডারও যথেষ্ট সমৃদ্ধ তাঁর। প্রকাশিত গ্রন্থ ২৭টি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সবগুলাে দিক সমন্বিত হয়েছে তার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সংগঠক সত্তায় । তিনি অনুভব করেছেন যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তােলার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়ােজন অসংখ্য উচ্চায়ত মানুষ। ‘আলােকিত মানুষ চাই’-সারা দেশে এই আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিশেবে সাতাশ বছর ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। ২০০০ সাল থেকে সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য তিনি দেশব্যাপী অভিনন্দিত হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরােধ আন্দোলন, পরিবেশ ও সুশীল সমাজ আন্দোলন তার নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, পিতা আযীম উদ্দিন আহমদ; মা বেগম করিমউনিসা জন্মস্থান : পার্ক সার্কাস, কলকাতা। জন্মসাল : ২৫ জুলাই ১৯৪০। পৈতৃক নিবাস : কামারগাতি, কচুয়া, বাগেরহাট। পুরস্কার : জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রােটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার : (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), শেলটেক পদক (২০০৬), মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক (২০০৬)।