‘সেই সময়’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ এই সেই সময় যখন কলকাতার বাবুসমাজ সূরা, নারী ও বুলবুলি-বিলাসে মগ্ন, যখন নব্যশিক্ষিত যুবকেরা প্ৰাণপণে ইংরেজ-অনুকরণে মত্ত, গ্রাম নিঃস্ব করে প্রজাশোষণের অর্থে চলেছে সংস্কৃতিচার্চা, সমাজ ও ধর্ম সংস্কার, তরুণ বিদ্যাসাগর রাত্রি জেগে রেড়ির তেলের আলোয় রচনা করছেন বাংলা গদ্যভাষা, জেগে উঠছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, এই সেই সময়- হ্যাঁ, একটি বিশেষ সময়ই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সুকীর্তিত উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। তিনি নিজেও এ-উপন্যাস সম্পর্কে লিখতে গিয়ে বলেছেন- “আমার কাহিনীর পটভূমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০ খ্ৰীষ্টাব্দ। এবং এই কাহিনীর মূল নায়কের নাম সময়।” লিখেছেন, “সময়কে রক্ত-মাংসে জীবিত করতে হলে অন্তত একটি প্রতীক চরিত্র গ্রহণ করতে হয়। নবীনকুমার সেই সময়ের প্রতীক। তার জন্মকাহিনী থেকে তার জীবনের নানা ঘটনার বৈপরীত্য, শেষ দিকে এক অচেনা যুবতীর মধ্যে মাতৃরূপ দৰ্শন এবং অদ্ভুত ধরনের মৃত্যু, সবই যে সেই প্রতীকের ধারাবাহিকতা, আশা করি তা আর বিশদভাবে এখানে বলবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় কথা শুধু এই যে, নবীনকুমারের চরিত্রে এক অকাল-মৃত্যু অসাধারণ ঐতিহাসিক যুবকের কিছুটা আদল আছে। অন্য কোনো প্ৰসিদ্ধ পুরুষের নাম বা জীবনকাহিনী আমি বদল করিনি...”। সত্যিই তাই। নাটকের শুরুতে যেমন দেওয়া থাকে পাত্ৰপাত্রীর নাম ও পরিচয়, তেমনভাবে এই বিপুল বর্ণাঢ্য উপন্যাসেরও গোড়াতেই যদি দেওয়া থাকত বিস্ময়কর মনে হত সেই তালিকা৷ মাইকেল, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও, হেয়ার সাহেব, দেবেন ঠাকুর-কে নেই। সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীই যেন নানান চরিত্র হয়ে চোখের সামনে জীবন্ত। যেটুকু তফাৎ তা হল, গবেষকের রচনায় প্ৰাণ থাকে না, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সেই প্ৰাণটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এক দুরন্ত সময়ের জীবন্ত চলচ্চিত্র ‘সেই সময়’। বঙ্কিম ও আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত এই গ্রন্থের দুটি খণ্ডকে এক মলাটের মধ্যে এনে সম্পূর্ণ নতুন আকারে প্রকাশিত হল এই রাজসংস্করণ। এ-গ্রন্থের বিপুল সমাদর ও স্থায়ী কীর্তিমূল্যের কথা মনে রেখে এ-এক আনন্দ-শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
একজন বাঙালি পাঠক হয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে এড়িয়ে যাওয়া ভীষণ শক্ত। প্রথম আলো থেকে নীরা, কবিতা থেকে গল্প,উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, দুহাতে লিখেছেন।কেবল লিখেছেন বললে ভুল হবে! লিখেছেন, আলোচিত হয়েছেন,সমালোচিত হয়েছেন কিন্তু অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে থেকেছেন। অসংখ্য পাঠক তাকে তুলে নেয়, পাঠ করে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষার জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন।
জন্ম: ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৪, ফরিদপুর জেলা
মারা গেছেন: ২৩ অক্টোবর, ২০১২, কলকাতা, ভারত
স্বামী বা স্ত্রী: স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় (বিবাহ. ১৯৬৭–২০১২)
সন্তান: সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: আনন্দ পুরস্কার (১৯৭২, ১৯৮৯); সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৫)
কুইজ: সুনীলের লেখা প্রথম বই কোনটি?
Title :
সেই সময় (অখণ্ড)(পটভুমিকা ১৮৪০ থেকে ১৮৭০) (বঙ্কিম সাহিত্য পুরস্কার)