ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ অন্তরঙ্গরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর কালকয়ী জনাদৃতি অন্যতম কারণ তাঁর ‘উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য।’ এ ব্যাপারে বঙ্কিম প্রসঙ্গের হুবহু প্রযোজ্য : ‘......... উজ্জ্বল শুভ্র হাস্য সকল বিষয়কেই আলোচিত করিয়া তুলিতে পারে।....... এই হাস্যজ্যোতির সংস্পর্শে কোনো বিষয়ের গভীরতার গৌরব হ্রাস হয় না, কেবল তাহার সৌন্দর্য রমণীয়তার বৃদ্ধি হয়, তাহার সর্বাংশের প্রাণ এবং গতি যেন সুস্পষ্টরূপে দীপ্যমান হইয়া উঠে।’ বিমল হাস্যরসের যেন অফুরান এক ডেটা-ব্যাংক মুজতবা। যেখানে পাঠক রসটির সব কটি রকম মজুদ পায়-ত্রৈলোক্যনাতের হৃদবৃত্তিক কৌতুক, বঙ্কিমচন্দ্রের বিষণ্ন হাস্য, প্রথম চৌধুরীর বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতুক, পরশুরামের প্রসন্ন হাস্য। মুজতবা আলীর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তার আরেকটি কারণ তাঁর উইটের চেয়ে বেশি হিউমার। তাই বলে উইটের কমতি নাই মুজতবায়। কারণ উইট হচ্ছে হিউমারেরই উন্নয়নের উপাদান, বুদ্ধিপ্রধান বৈদগ্ধ্যরসরূপে প্রাণবান হাস্যরসের শক্তিসঞ্চারী জ্ঞাতি। হিউমার যদি মানসিক অবস্থা, উইট তবে নির্বিশেষ। এই নির্বিশেষের পরশেই জীবনানুসৃতি আলী একজন মহৎ শিল্পী। তাঁর অন্তরঙ্গরচনার শৈলী নজিরবিহীন। আবদুশ শাকুর
সূচি *বই কেনা *কাইরো *‘কলচর’ *বর্ষা *প্যারিস *‘আমার ভাণ্ডার আছে ভরে-’ *ভাষাতত্ত্ব *দাম্পত্য জীবন *পঁচিশে বৈশাখ *তোতা কাহিনী *চরিত্র পরিচয় *আড্ডা *পাণ্ডা *‘নেভা’র রাধা *ফরাসী-জর্মন *ইঙ্গ-ভারতীয় কথোপকথন *ঋতালী *গাইড *রসগোল্লা *বাঙ্গালী মেনু *রন্ধন-যজ্ঞ *‘বাশবনে-’ *বাবুর শাহ *মূখের উপাসনা অপেক্ষা...... *‘পঞ্চাশ বছর ধরে করেছি সাধনা।’ *চোখের জলের লেখক *বিষ্ণুশর্মা *এমেচার ভার্সস স্পেশালিস্ট *ভাষা *রবি-পুরাণ *পুষ্পধনু *নস্রুদ্দীন খোজা (হোকা) *ইভান সের্গেভিচ তুর্গেনেফ *গাঁজা *দশের মুখ খুদার তবল *রসিকতা *কুট্টি *আড্ডা-পাসপর্ট *দরখাস্ত *বনে ভূত না মনে ভূত *চুম্বন *খোশগল্প
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ সালে, সিলেটের করিমগঞ্জে। পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতক ১৯২৬-এ। এরপর আফগানিস্তানে কাবুলের শিক্ষাদপ্তরে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় অধ্যাপক হিশেবে যােগ দেন। দুবছর পরে স্কলারশিপ নিয়ে যান জার্মানির বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩২ সালে। ইউরােপ, এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে কর্মসূত্রে সঞ্চয় করেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ১৯৩৪-৩৫ সালে পড়েন কায়রাের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর বরােদায়। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপনায় যােগ দেন। দেশ বিভাগের পরে চলে আসেন জন্মভূমি তকালীন। পূর্ব-পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে বক্তৃতা করেন সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে। ১৯৪৯-এ অধ্যক্ষ হিসেবে যােগ দেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজে। এখানে থাকাকালীন বাংলাভাষার সমর্থনে লেখেন পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' শীর্ষক প্রবন্ধ। সরকার কৈফিয়ত তলব করলে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে যান ভারতে। স্বল্পসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরি শেষে যােগ দেন আকাশবাণীর উচ্চপদে, পরবর্তীতে বিশ্বভারতীর ইসলামি সংস্কৃতির প্রধান অধ্যাপক হিসেবে। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন বহুভাষাবিদ। ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান ইত্যাদি ইউরােপীয় ভাষা ও আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত, গুজরাটি, মারাঠি ইত্যাদি প্রাচ্য ও ভারতীয় সহ মােট পনেরােটি ভাষা জানতেন তিনি। বহু ভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা রসরচনায় মৌলিক অবদানের জন্য অবিস্মরণীয়। উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ‘দেশে বিদেশে’, ‘শবৃনম’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘হিটলার’, ‘চাচা কাহিনী', ‘ধূপছায়া’, ‘জলে ডাঙায়’, ‘মুসাফির’, ‘পঞ্চতন্ত্র, ‘অবিশ্বাস্য’, ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’, ‘টুনিমেম', ইত্যাদি। ১৯৪৯-এ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নরসিংহদাস সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন। বাংলাদেশে ফেরেন ১৯৭২-এ ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪-এ জীবনাবসান বাংলাদেশেই। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিশেবে পান একুশে পদক ২০০৫ (মরণােত্তর)।