ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কলকাতার প্রায় প্রতিটি বাড়ির পিছনে আছে দীর্ঘ ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন একজন অধিষ্ঠিত দেবতা বা দেবী। তাঁদের ঘিরেই গড়ে উঠেছে এক একটি এইরকম বনেদী বাড়ির ইতিকথা। কিন্তু সেই ইতিকথার সবটুকুই শুধু দেব-দেবীর কথা বা পাঁচালী মাত্র নয়। সেই ইতিকথায় আছে মানুষের গৌরবোজ্জ্বল কীর্তিগাথা যা সেই বাড়ির মানুষদের গর্ব ও অহঙ্কারের মূলধন, আর আছে বনেদী-পরিবারের পাপপুন্যের নানা ঘটনা, আছে প্রেম-আশাভঙ্গ আনন্দ-বেদনার অকথিত কাহিনী, অট্রালিকার ইট-কাঠ দেউড়ি-খিলানে জমে আছে পরিবারের কত না নরনারীর দুঃখ জমাট দীর্ঘশ্বাস। এই রকম একটি অট্রালিকার পটভূমিতে রচিত বর্তমান উপন্যাস, সেই পরিবারের অধিষ্ঠাত্রী দেবীই হলেন ‘সিংহবাহিনী’ । এই উপন্যাসে যেমন আছে দেবীর প্রতিষ্ঠিতা হওয়ার কাহিনী, তেমনিই আছে মানুষের উত্থান ও পতনের কাহিনী, আছে মানুষের চিরন্তন লোভ লালসা ব্যথা-বেদনা , আকাঙ্ক্ষা-হতাশার কাহিনী, আছে সর্ব তুচ্ছতাকে অতিক্রম করে মানবতায় উত্তরণের জন্য নারীর জীবনজয়ী সংগ্রামের কথা।
সমরেশ মজুমদার
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪।
তাঁর শৈশব এবং কৈশাের কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। লেখাপড়ায় মন বসতাে না একদমই। ইচ্ছে ছিল নায়ক হবেন। তাই জলপাইগুড়ির বন্ধুদের নিয়ে সাজাতেন নাটকের দল। বাজারের জন্য দিদিমার দেয়া টাকা বাঁচিয়ে তাও খরচ করতেন বন্ধুদের নিয়ে। ষােলাে বছরের এক তরুণ সমরেশ কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে, বাংলায়। এখানেও শুরু হলাে থিয়েটার আর নাটক লেখা, গল্প লেখার কাজ। নাটক লিখলেও নাটক হতাে না। অভিনয়ও জমছে না ঠিকমতাে। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাসের সার্টিফিকেট জুটলাে কপালে। কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলাে না। এবার নাটক বাদ। গল্প লেখায় সময় ব্যয়। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপা হলাে তাঁর প্রথম উপন্যাস দৌড়। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রকাশিত গ্রন্থ ২১৫।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পান ‘আনন্দ পুরস্কার'। কালবেলা উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে।