...খাওয়া-পরার জন্য উৎপাদন করিতে হয় সকলকেই; কিন্তু উৎপাদনের জন্য দরকার উৎপাদনের হাতিয়ার বা যন্ত্র। পশুরও খাইতে হয়। বাঁচিয়া থাকার জন্য আহার সংগ্রহ করিতে হয়। কিন্তু হাত পা-ই তাহার হাতিয়ার: নিজের স্বাভাবিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারাই পশু খাদ্য আহরণ করে। কিন্তু মানুষের বেলায় তাহা হয় না। কৃত্রিম হাতিয়ার দ্বারা মানুষ তাহার স্বাভাবিক হাতকে সম্পূর্ণ করে। এইখানেই মানুষের সঙ্গে পশুর জগতের প্রভেদ; কৃত্রিম হাতিয়ারের ব্যবহার হইতেই মানুষের সমাজের শুরু। ...
উৎপাদনের জন্য যে হাতিয়ার বা উপকরণ দরকার, তাহাকে বলা হয় উৎপাদন শক্তি। আর উৎপাদনের কাজে মানুষ মানুষের সঙ্গে যে সব সম্পর্কে আবদ্ধ হয় তাহাকে বলা হয় উৎপাদন সম্পর্ক। উৎপাদনশক্তি এবং উৎপাদন-সম্পর্কের মধ্যে যে বিরোেধ বাধে, তাহা প্রকৃতপক্ষে শ্রেণী সংগ্রামেরই প্রকাশ। ইতিহাসের ধারায় এবং সমাজের বিকাশের পথে সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে শ্রেণীসংগ্রাম।
রেবতী বর্মণ
বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নির্মাতা ছিলেন আজন্ম বিপ্লবী রেবতী বর্মণ। তিনি ১৯৫২ সালের ৬ই মে মারা যান। জন্মেছিলেন ১৯০৩ সালে বেঁচে ছিলেন মাত্র ৪৭ বছর। তার নিজ গ্রামের মানুষদের কাছে রেবতীবাবু বলে পরিচিত ছিলেন। আর আমাদের কাছে সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ বইয়ের লেখক হিসেবে পরিচিত। যে বইটি ১৯৫২ সাল থেকে এ উপমহাদেশের বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যকীয় বই। সেই অমর গ্রন্থের নাম হলাে সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ। ব্রিটিশ-ভারতের জেলে থাকাকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকার রেবতী বর্মণের উপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করে। যে কারণে তিনি ঘাতকব্যাধি কুষ্ঠে আক্রান্ত হন। ১৯৪৯ সালে নিজ জন্মভূমি ভৈরবে বসে কুষ্ঠরােগাক্রান্ত পচন ধরা আঙুলে রশি দিয়ে হাতের সঙ্গে কলম বেঁধে রচনা করেন সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশ।