রু চোখ খুলে তাকাল। মাথার কাছে জানালায় দৃশ্যটির পরিবর্তন হয়েছে। এর আগেরবার
সেখানে ছিল নীল আকাশের পটভূমিতে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ, এবারে দেখাচ্ছে ঘন অরণ্য।
দৃশ্যগুলি কৃত্রিম জেনেও রু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। পৃথিবী ছেড়ে এই মহাকাশযানে
ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে প্রায় তিন শতাব্দী আগে-আর কখনােই সেই
পৃথিবীতে ফিরে যাবে না বলেই কি এই সাধারণ দৃশ্যগুলি এত অপূর্ব দেখায়?
রু একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে বসতেই খুব কাছে থেকে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল,
"শুভ জাগরণ, মহামান্য রু। আপনি এক শতাব্দী পর ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আপনার
জাগরণ আনন্দময় হােক।"
"ধন্যবাদ কিলি।"
"আমি কিলি নই মহামান্য রু। আমি কিলির প্রতিস্থাপন রবােট।"
"কিলির প্রতিস্থাপন?" রু একটু অবাক হয়ে বলল,
"কপােট্টন অতি ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। মেমােরি সেল একটানা দুই
শতাব্দীর বেশি কাজ করে না। পাল্টাতে হয়।"
রুজিব দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, "আহা বেচারা। কিলির সাথে আমার এক
ধরনের বন্ধুত্ব হয়েছিল জান?"
কণ্ঠস্বরটি হাসির মতাে শব্দ করে বলল, "জানি।"
"কী হয়েছে কিলির?"
"কেমন করে জান?"
কিলির
মূল সিস্টেমটি আমার কপােট্টনে বসানাে হয়েছে। আমি তার অনেক
"কারণ
কিছু জানি।"
"ভারি মজার ব্যাপার। তােমাদের মৃত্যু নেই। যখন একজনের সময় শেষ হয়ে
আসে তখন অন্যের মাঝে নিজেকে সঞ্চারিত করে দাও। তােমরা বেঁচে থাক
অনির্দিষ্টকাল।"
"কথাটি মাত্র আংশিক সত্যি মহামান্য রু।"
"আংশিক? কেনআংশিক কেন?"
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।