চিতাবাঘের ক্ষিপ্রতা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সামনাসামনি নয়; 'ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক' চ্যানেলে। টিভির পর্দা থেকে দৃষ্টি সরানো তখন কঠিন হয়ে যেতো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম আর দ্রুতগতিসম্পন্ন চিতাবাঘের শিকার করার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। সত্যি বলতে, চিতাবাঘ আসলেই ট্যালেন্টেড; নয়ত এতো সুক্ষ্মভাবে কোনোকিছুর পিছু নিয়ে তাকে ধাওয়া করা সহজ ব্যাপার না। 'পশু চিতাবাঘের' ক্ষিপ্রতার দিকে মুগ্ধনয়নে তাকিয়ে থাকার সময় আমি জানতাম না একজন 'মানুষ চিতাবাঘ'ও এই পৃথিবীর বুকে ছিলেন; যাঁর ভয়ে বাতিল শক্তি থরথর করে কাঁপতো, যাঁর থাবায় দুমড়ে মুচড়ে যেতো সকল জালিমের জুলুমের হাত। তিনি হলেন- 'দ্য প্যান্থার' - 'সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স'।
শুধু যে আমি জানিনা, বিষয়টি এমন নয়। বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষই এসকল প্রকৃত বীর সম্বন্ধে বেখবর। আমরা মেকি হিরোদের দেখে বিস্ময় প্রকাশ করি, কিন্তু সত্যিকারের মহানায়কদের চিনতে চাইনা। আমরা শাহরুখের রোমান্টিকতা দেখি, কিন্তু আবু যর রা. এর যুহদের কথা জানিনা। আমরা সালমানের সিক্স প্যাক দেখি, কিন্তু সালাহ আদ দ্বীন আইয়ুবী রহ. এর আল কুদস বিজয়ের ব্যাপারে জানিনা। আমরা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেয়াকে পুরুষত্ব মনে করি, কিন্তু মাত্র সতেরো বছর বয়সে সিন্ধু বিজয় করা মুহাম্মদ বিন কাসীম রহ. এর বীরত্বের কথা জানতে চাইনা। যুগে যুগে উলামায়ে কেরামের ত্যাগ - তিতিক্ষার কথা বাদ'ই দিলাম; আমরা নিজেদের মুসলমানিত্বের মৌলিক ইতিহাসই জানিনা। আমরা ভ্রান্ত মতবাদগুলো আঁকড়ে ধরে বলতে থাকি, "মুসলিম হয়ে লাভ নাই! মুসলিম মোল্লারা তেমন কিছুই জানেনা! এদের দ্বারা কিছুই হবেনা!"। আফসোস! আমরা যদি সেই স্বর্ণালী দিনগুলো নিয়ে জানার চেষ্টা করতাম, তাহলে ঠিকই পড়তাম, ভাবতাম।
সেই স্বর্ণালী ইতিহাসের পাতায় পাতায় যেসকল মহানায়কদের নাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাঁদের মধ্যেই একজন 'সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স'। মাওলানা ইমরান আহমাদ লিখিত 'দ্য প্যান্থার' গ্রন্থটি তাঁকে নিয়েই।
'সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স রাহিমাহুল্লাহ'- কে নিয়ে বাংলা গ্রন্থের পরিমাণ খুবই অল্প। সেই হিসেবে 'দ্য প্যান্থার' এক অসামান্য বই। এখানে আছে গা শিহরানো ঘটনামালা, শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ, ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত এক মহানায়কের বীরত্বের ইতিহাস। যে ছেলেটিকে একসময় লোকেরা দাস হিসেবে কেনাবেচা করতো; সেই ছেলেটিই একসময় 'চিতারাজ' - 'দ্য প্যান্থার' হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে, এ বিষয় হয়ত কেউ কল্পনাও করেনি! কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা হক্ব- কে বিজয়ী করতে চাইলে যাকে ইচ্ছা সেই কাজ করার জন্যে মনোনীত করেন।
গ্রন্থটি আটাশটি পর্বে বিভক্ত। এটি পুরোপুরি 'উপন্যাস' না হলেও, পাঠক গ্রন্থটি পাঠ করে একধরণের 'ঔপন্যাসিক' স্বাদ পাবেন। বইটি পড়ার সময় মনে হয়েছে যেন কোনো 'সিনেমা' দেখছি। নিজেকে সেই জগতে হারিয়ে ফেলেছি। চারিদিকে ঘোড়ার চিঁহি ডাক, তলোয়ারের ঝঙ্কার আমাকে পুলকিত করে তুলেছে। 'সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স' রহ. এর জন্ম হয়েছিলো যে গোত্রে সেই গোত্রের লোকেরা ছিলো একেকজন বীরপুরুষ। শৈশবে বন্য নেকড়ে, কৈশোরে বাঘ আর যৌবনে সিংহের সাথে টক্কর দিয়েই এরা বেড়ে উঠতো। দুর্দান্ত, দুর্ধর্ষ যোদ্ধাজাত এই সম্প্রদায়েই জন্ম নিয়েছিলেন 'দ্য প্যান্থার'। তাই তো, তিনি মোকাবেলা করেছিলেন তিনটি শক্তির: তাতার বাহিনী, ক্রুসেডার এবং ফেদাইন (গুপ্তঘাতক)। ফেদাইন হলো তারা, যাদের বিশ্ব ইতিহাস চিনে 'এসাসিন' নামে। সুলতান সালাহুদ্দিন আল আইয়ুবী রহ. এর সময়ে যে লেভান্ট হাতছাড়া হয়েছিলো, সেই লেভান্ট মাত্র একটা টর্নেডো অভিযানেই উদ্ধার করেন একজন লৌহমানব। নাম তাঁর রুকনুদ্দিন বাইবার্স!
ইমরান আহমাদ
Title :
দ্য প্যান্থার (সুলতান রুকনুদ্দিন বাইবার্স) (হার্ডকভার)