ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ সমকালীন কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমাযূন আহমেদ এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গ্রন্থজগতের পরিসংখ্যান বিগত কয়েক বৎসর যাবৎ এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করছে। অনতিতরুণ এই কথাশিল্পীর পাঠকমনোরঞ্জনের ক্ষমতা ইতোমধ্যেই প্রায় কিংবদন্তীতুল্য।
কিশোরবয়সী থেকে বৃদ্ধ, স্বল্পশিক্ষিত থেকে বুদ্ধিজীবী পণ্ডিত- সকলেই তাঁর উপন্যাসের আগ্রহী পাঠক, অথবা টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কাহিনীর নাট্যরূপায়ণের বিমুগ্ধ দর্শক। কোন ক্ষমতায় এভাবে সকলকে কাছে টানেন হুমায়ূন আহমেদ? চিত্রল গতিময় সহজ ভাষাবিন্যাস। অভাবনীয় ঘটনা বিশ্বাসযোগ্যভাবে ঘটানর মনোহারী কৌশল। কল্পনা হার মেনে যায় এমন অকল্পনীয় বিদ্যুন্নিত সংলাপ। এবং তাঁর কাহিনীতে ছড়ান জীবন কখনোই আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত-জীবনের আমা নিরাশা অনিশ্চিতি এবং দোলাচলপ্রবণ মূল্যবোধ, তার সামান্য লাভ ও সামান্য ক্ষতির বন্ধনে আততিময় অস্তিত্ব। হুমায়ূন আহমেদের যে-কোন উপন্যাস ধারণ করে আছে তাঁর সৃজনীসত্তার মনন-কল্পনার এ-সকল উপাদান। সাধারণ মানুষের কাতর জীবন চূর্ণকণায় ছড়িয়ে থাকে তাঁর লেখায়।
আজ থেকে প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বে যখন প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ বেরোয়, তখন প্রথিতযশা অধ্যাপক ডক্টর আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, “হুমায়ূন আহমেদ বয়সে বতুণ, মনে প্রাচীন দ্রষ্ঠা, মেজাজে জীবনরসিক, স্বভাবে রূপদর্শী, যোগ্যতায় দক্ষ রূপকার। ভবিষ্যতে তিনি বিশিষ্ট জীবনশিল্পী হবেন- এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করব।” এ-ভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের। তারপর ক্রমাগত পথচলার প্রবাহে বিগত দেড় যুগে তিনি চল্লিশটির বেশি উপন্যাস উপহার দিয়েছেন এ-দেশের পাঠকসমাজকে। পণ্ডিত সমালোচক ও হৃদয়বান গল্পপ্রেমিক উভয়েরই প্রত্যা্শা তিনি পূরণ করে চলেছেন। একই সঙ্গে অতিপ্রজ অথচ শিল্পরুচিময় লেখক তাঁর মতো আর কেউ এই মুহূর্তে আছেন কিনা সন্দেহ। প্রতি বৎসর অব্যহত গতিতে তাঁর ফসলের ডালা ভরে উঠছে।
প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার আনন্দ ও গর্ব যে, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসসমগ্র বিভিন্ন খন্ডে ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করার দায়িত্ব সে নিয়ে পেরেছে।
সূচি * দেবী * এইসব দিন রাত্রি * আমার আছে জল
হুমায়ূন আহমেদ
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগরজীবনের পটভূমিতেই তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহরণ অচিনপুর ফেরা মধ্যাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ বারবার তাঁর লেখায় ফুঠে উঠেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর জোছনা ও জননীর গল্প ১৯৭১ আগুনের পরশমণি শ্যামল ছায়া নির্বাসন প্রভৃতি। উপন্যাস গৌরীপুর জংশন যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ চাঁদের আলােয় কয়েকজন যুবক'-এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘বাদশা নামদার’ ও ‘মাতাল হাওয়ায় । অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজড়া ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। গল্পকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ভিন্ন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত। ভ্রমণকাহিনি, রূপকথা, শিশুতােষ, কল্পবিজ্ঞান, আত্মজৈবনিক, কলামসহ সাহিত্যের বহু শাখায় তাঁর বিচরণ ও সিদ্ধি।
হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং মৃত্যু ১৯ জুলাই ২০১২।