আজ দীর্ঘ ছত্রিশ বছর পর মস্তিষ্কের স্মৃতিকোষে লুকিয়ে রাখা পাকসেনাবাহিনী দ্বারা সংকটত একটি নির্মম ও অবিশ্বাস্য গণহত্যার প্রত্যক্ষ বিবরণ লিখতে বসেছি। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে, কেরানীগঞ্জ থানার অন্তর্গত জিঞ্জিরা, কালিন্দি ও শুভাড্যা—এই তিন ইউনিয়ন ব্যাগী রােমহর্ষক গণহত্যাটি সংঘটিত হয় ১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল, শুক্রবার। সূর্য ওঠার কিছু আগে, তের পাচটা থেকে রেহ করে দুপুর বারোটা পর্যন্ত পরিচালিত ওই বর্বর অভিযানে সেদিন কত প্রাণ ঝরেছিল, তার সঠিক হিসাব কোনোদিনই আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হবে না। তবে আমার নিজের ধারণা, কম করেও এক হাজার নর-নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশু-কিশার ওই অভিযানে সেদিন নিহত হয়েছিল। যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ২৫শে মার্চের পর প্রাণ বাচাতে ঢাকা থেকে পালিয়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারের বিভিন্ন গ্রামে আশ্রয় গ্রহণকারী বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসহায় মানুষ। পরম করুণাময় মহান স্রষ্টার অসীম করুণায় আমি সেদিন পাকসেনাদের। নির্বিচার নিধনযজ্ঞের হাত থেকে অলৌকিকভাবে বেচে গিয়েছিলাম।