ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কবিতা যদি ধর্ম, দর্শন মরমিবাদের সমার্থক হয়, সঙ্গীত ও চিত্রকলার সম্পূরক হয়, কিংবা কবিতা যদি প্রমিথিউসের আগুন আর ঐশ্বরিক স্নিগ্ধতাকে ধারণ করে, সে কবিতা নিশ্চিতভাবে জিব্রান কাহলিল জিব্রানের কবিতা। শুধু কবিতা বলি কেন, তাঁর দর্শন, চিত্রকলা, গল্প, উপন্যাস সবই কবিতা। এমন অনেকেই আছেন একাধারে অনেক কিছু, কিন্ত একটি দর্শনকে সমগ্র লেখালেখিতে আত্মার মতো ধারণ করে বাইবেলীয় ভাষায় ও অবতারসুলভ জ্যোতির্ময়তায় মন্ত্র বা সঙ্গীতের ঐশ্বর্যে বাঙময় করতে পারেন একজন কাহলিল জিব্রানই। তাঁর কবিতা যেন উঠে এসেছে পর্বতের উচ্চতা থেকে, সমুদ্রের নাভিমূল থেকে, কোনো দেবকণ্ঠ থেকে। এক অনির্বচনীয় আনন্দ ও অভিজ্ঞানের কবিতাই তাঁর কবিতা। দ্য প্রফেট তেনম একটি কবিতা, কিংবা বলা যায়, অনেক কবিতা-ফুল দিয়ে গাঁথা মালার মতো একটি দীর্ঘ কবিতা। দ্য প্রফেট আসলে কী? কবিতা নাকি গদ্য? এর বিষয় কী? আর প্রফেট বা কে? তিনি কি অবতার, প্রবক্তা নাকি দ্রষ্টা? তিনি কি কবি নাকি ধর্মোত্থিত কোনো নবী? প্রশ্নগুলো জরুরি আবার জরুরি নয়। কেন জরুরি বা জরুরি নয় তা জানার জন্য অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে এ গ্রন্থের প্রতিটি শব্দ, বাক্যবিন্যাস ও ভাবের বহুস্তরের অন্তরে পৌছা চাই। তখন মনে হবে এ গ্রন্থ না গদ্য না পদ্য, উভয়ই; প্রফেট না কবি না নবী, উভয়ই। আর তখনই কবিতা ও দর্শনের যুগলবন্দীতে পাঠকের মনে জন্ম নেবে এক অলৌকিক বোধ ও বোধির, এবং তখনই শোনা যাবে মর্মের সাথে ধর্মের একাত্মতায় পৃথিবী স্বর্গময় হয়ে ওঠার অশ্রুতপূর্ব সঙ্গীত।