রাজুর বােন বকুলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। পরিবারের প্রথম বিয়ে, তাই সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হইচই। বিয়ের কার্ডে কী লেখা হবে সেটা ঠিক করতেই ইউনিভার্সিটির তিন জন বাংলার বাঘা বাঘা প্রফেসরের সাথে আলােচনা করা হয়েছে। কার্ড ছাপানাের পর মা রাজুকে ডেকে বললেন, রাজু বাবা তুই একবার সিলেট যা। সিলেট? রাজু চোখ কপালে তুলে বলল, সিলেট কেন? তাের মামা আছেন, বিয়ের একটা কার্ড দিয়ে আয়। গিয়ে দিয়ে আসতে হবে কেন? পােস্ট করে দিলেই হয়। মা জিবে কামড় দিয়ে বললেন, ছিঃ! সবকিছুর একটা নিয়মনীতি আছে না! বিয়ের কার্ড হাতে হাতে দিতে হয়। রাজু মুখ শক্ত করে বলল, বেশ! তাহলে একটা প্লেনের টিকিট কিনে দাও আমেরিকা গিয়ে ছােট চাচার বিয়ের কার্ডটাও দিয়ে আসি। আসার সময় ডিজনিল্যান্ডটাও দেখে আসব। মা চোখ পাকিয়ে বললেন, ফাজলামি করবি না। যা বলেছি কর। ট্রেনে যাবি-আসবি তাের সমস্যাটা কোথায়? কাজেই রাজুকে বিয়ের কার্ড নিয়ে সিলেট দৌড়াতে হল। সে কলেজে ফাস্স্ট ইয়ারে পড়ে। এই বয়সটার নানারকম যন্ত্রণা, ছোট বলে আলাদা করে কেউ আর আলাদা করে খাতির-যত্ন করে না, আবার বড় হয়ে গেছে বলে কেউ স্বীকার করে না। যত রকমের নােংরা কাজগুলাে তার ঘাড়ে এসে পড়ে। সিলেট যাওয়া অবশ্যি ঠিক নোংরা কাজের মাঝে পড়ে না। সত্যি কথা বলতে কী সে এই দায়িত্বটা পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছে, না হলে তাকে ডেকোরেটরের কাছে আর দর্জির কাছে দৌড়াদৌড়ি করতে হত। তাছাড়া মামার সাথে অনেকদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই, একটু পাগলাটে মানুষকিন্তু তাদের খুব আদর করেন। প্রায় সারাদিন ট্রেনে বসে থেকে রাজু সিলেট পৌছল বিকেলবেলা।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।