আরব স্থাপত্য ইসলামি স্থাপত্যের প্রারম্ভিক অধ্যায়। ইসলাম আবির্ভাবের প্রাক্কালে মধ্য আরব হিজাজে আরবদের কোনো স্থাপত্য ঐতিহ্য না থাকায় মহানবীর মদীনার গৃহ ও মসজিদকে কেন্দ্রবিন্দু ধরে নিকটবর্র্তী সিরীয়, গ্রেকো-রোমান-বাইজান্টাইন ও পারসিক সভ্যতা থেকে উপকরণ নিয়ে যে মিশ্রিত উপকরণের সমন্বয়ে নতুন স্থাপত্যের সৃষ্টি করা হয়েছে তা-ই বর্তমানে আরব স্থাপত্য বলে চিহ্নিত। এই আরব স্থাপত্যের কাঠামোতে পরবর্তীকালে নতুন নতুন তুর্কি, আর্মেনীয়, চৈনিক, ভারতীয়, স্প্যানিশ ও উত্তর আফ্রিকীয় উপকরণ সংযোজিত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম স্থানীয় স্থাপত্য-প্রকারের যে বিকাশ ঘটেছে তা এই আরব স্থাপত্য থেকেই উদ্ভূত। আরব স্থাপত্যের গুরুত্ব এইখানেই। আরব স্থাপত্য তাই সামগ্রিক ইসলামি স্থাপত্যের ভিত। ইসলামি স্থাপত্যের গঠন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে জানতে হলে আরব স্থাপত্য শীর্ষক এই গ্রন্থটির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গ্রন্থকার বইটিতে সমসাময়িক আরবি ঐতিহাসিকদের যেমন উদ্ধৃতি দিয়েছেন তেমনি আধুনিক কালের প্রত্মতাত্তিক আবিষ্কারের উপাত্ত সংযোজনে বিদ্যমান ইমারতের বর্ণনা ও ইতিহাসের আলোকে তার মূল্যায়নও করেছেন। ইতিহাস ও স্থাপত্যের ছাত্রদের জন্য বইটি একটি আবশ্যিক পাঠ হিসেবে বিবেচিত হবে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
ড. এ বি এম হোসেন
পুরো নাম আবুল বাশার মোশারফ হোসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরিটাস ও ইসলামী শিল্পকলা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। তাঁর জন্ম ১৯৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় ধামতী গ্রামে। দেবীদ্বার হাই স্কুল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের সাফল্যে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার উচ্চশিক্ষার নিমিত্তে তাঁকে মেধাবৃত্তি দিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি ১৯৫৮ ও ১৯৬০ সালে ইতিহাস ও ইসলামিক আর্কিওলজিতে যথাক্রমে বিএ অনার্স ও পিএইচ.ডি লাভ করে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা আরম্ভ করেন এবং ১৯৭২ সালে পূর্ণ প্রফেসর পদে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি বিভাগীয় প্রধান, চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডীন ও প্রশাসনিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছিলেন। তিনি ২০০১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম প্রফেসর এমিরিটাস হিসাবে সম্মাননা প্রাপ্ত হন। তাঁর নিবিড় গবেষণার বিষয়বস্তু ইসলামী শিল্পকলা হলেও তিনি তাঁর মূলধারার বিষয় মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক ইতিহাস থেকে বিচ্যুত হননি। তাঁর দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ফসল সাম্প্রতিক প্রকাশিত বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য ইতিহাসের গ্রন্থটি (২০১১ সালে ইউজিসি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত)। তাঁর লিখিত গবেষণা গ্রন্থের সংখ্যা অদ্যাবধি ১১। ১৯৭৭ সালে নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য গঠিত বোর্ডে তাদের মনোনীত সদস্য নির্বাচিত করেন। তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাংলা একাডেমির সম্মানিত আজীবন ফেলো।