‘বালিকার চন্দ্রযান’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ মি. আলী সপরিবার লন্ডনপ্রবাসী। তাদের তিন মেয়ে। তারা ব্রিটেনে বড় হচ্ছে কিন্তু বাঙালি মা-বাবার নজরদারির জন্য তারা তাদের ব্রিটিশ বন্ধুদের মতো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছে না। যেহেতু মিনার বয়স ১৬ পেরিয়েছে, পুলিশও চাইলে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, তাই সে এককাপড়ে বেরিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে। বন্ধুরা সেখানে নেশা করে, রাস্তায় ছিনতাই করে আর জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয় শারীরিকভাবে। এ স্বাধীনতার আনন্দটুকু অনুমান করেছিল মিনা, কিন্তু এসব ব্রিটিশ বন্ধু যে শেষ পর্যন্ত হঠকারী, এশীয়দের মনে করে ‘বাদামি শুয়োর’ আর ‘বাদামি কুক্কুরী’—এটা বুঝতে মিনার দুই দিনও লাগে না। এর মধ্যেই, নেশা করে ঘুমের মধ্যে মিনা কখন তার কুমারীত্ব হারিয়েছে, টেরই পায়নি। সব বুঝতে পেরে সে হাজির হয় নিজেদের বাসার দরজায়, ‘মাম, আমি ঢাকা যাব।’ কিন্তু ফেরা কি এত সহজ? তখন আমরা হাহাকার শুনি মি. আলীর কণ্ঠে, ‘উহাদের কোনো স্বদেশ নাই।’
সৈয়দ শামসুল হক তাঁর অসামান্য ভাষায় লিখেছেন বালিকার চন্দ্রযান। এ উপন্যাসে শিকড়হীন উদ্বাস্ত্ত হৃদয়ের হাহাকার পাঠককে আপ্লুত করবে।
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক, যিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদসহ সাহিত্যের সব শাখায় অবদান রেখে সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত ছিল। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, যা তাঁকে এই পুরস্কারের সবচেয়ে কম বয়সী প্রাপক করে তোলে। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।