বাঙালির জয় বাঙালির ব্যর্থতা (হার্ডকভার)
বাঙালির জয় বাঙালির ব্যর্থতা বইটি নিয়ে কিছু বলতে গেলে সবার আগে বইটির লেখকের কথা বলতে হয়। বইটির লেখক ড. ফ. র. আল সিদ্দিক অত্যন্ত বিদ্বান এবং জ্ঞানী একজন মানুষ। তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটেছে এই বইটিতে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর লক্ষ্য করা গেছে বইটির প্রতিটি পাতায়। অনেক তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে তিনি বইটি লিখেছেন। জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যাটি পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি মনে করি প্রতিটি বাঙালির এই বইটি পড়া উচিত। লেখকের দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে তাঁর বইটি। অসাধারণ এই বইটির জন্য লেখককে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বুক রিভিউ: "বাঙালির জয় বাঙালির ব্যর্থতা" নামক ড. ফজলুর রহমান আল সিদ্দিক স্যারের বইটি আমি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বইমেলা থেকে যখন কিনি তখন বিক্রেতা (ছোকড়া ছেলে) বলেছিল, বইটি নেন, উনার লেখার মান ভাল। আমি বেকুব হয়ে বিক্রেতার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলাম, বলে কি ছেলে। হুবহু প্রকাশকদের মত শ্রদ্ধেয় গুরুজনের লেখার মান নিয়ে কথা বলছে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী, বিজ্ঞানী, অনেক দেশ ঘুরার অভিজ্ঞতা ও ৮০ বছরের বর্ষীয়ান লেখকের লেখার মান নিয়ে ছোকড়ার মন্তব্য। ফুঁ, ফাং, ভুং, ভাং আর ভাল্লেগা না টাইপ ফেইসবুক ল্যাংগুয়েজে অভ্যস্ত ছোকড়াদের মন্তব্যতে বুঝতে পারলাম উনি নতুন প্রজন্মের মাঝেও আসন পেয়েছেন। ভাষা উন্নত, সাবলীল ও গতিশীল। একটানা পড়িনি বলে বইটি পড়তে আমার তিনদিন লেগেছে। বইটি মূলত: লেখকের বিভিন্ন আর্টিক্যালের সংকলন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে "চলতিপত্র" নামক পত্রিকায় প্রকাশনা বেশি ছিল। বইয়ের শুরুর প্রথম আর্টিক্যালে 'জয় বাংলা"কে জাতীয় ধ্বনি করার যুক্তিসংগত দাবী তুলেছেন। অংকের বেসিক নিয়ে উনার চমৎকার গবেষণা হল; একদম ছোট বয়সের বাচ্চাদের গণনা করতে গিয়ে এক শত পর্যন্ত মুখস্থ করতে হয়। ইংরেজিতে টুয়েন্টি পর্যন্ত মুখস্থ করলেই হল। তার পর টুয়েন্টি ওয়ান, থার্টি ওয়ান ইত্যাদি। টুয়েন্টি পর্যন্ত শিখতে পারলে বাকীটা ফর্মুলায় পরে যায়। অতি সহজ নিয়ম। তেমনি বাংলায় সংখ্যার জন্য তিনি তিনটি পদ্ধতি বলেছেন এর মধ্যে সহজটি হল এগার না বলে "দশ এক", একুশ না বলে "বিশ এক" ইত্যাদি বাচ্চারা দ্রুত শিখতে পারবে। তিনি একটা চরম সত্য কথা বলেছেন ছাত্র/ছাত্রীদের মেধা বিকশিত করার বিষয়ে। দেশের পলিসি মেকার মন্ত্রী সচিব ও ধনীর বাচ্চারা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। ওখানে বাচ্চারা "ও লেভেল" (এসএসসি সমমান) বা "এ লেভেলে" (এইচএসসি সমমান) নিজের পছন্দমত যে কয়টা খুশী সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারে। বছরে কয়েকবার আংশিকভাবে পরীক্ষা দেয়। কোনটায় ফেল করলে সে সাবজেক্টে পুনরায় পরীক্ষা দিলেও হল। অথচ এই পলিসি মেকরা দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানদের জন্য ইংলিশ মিডিয়ামের মত সহজ নিয়ম না করে বাংলার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে জটিল সিস্টেম করে রেখেছে। ১১/১২ সাবজেক্টে একবারে পাশ করতে হবে। ফেল করলে সব সাবজেক্টে পুনরায় পরীক্ষা দাও। এতে বাংলা মিডিয়ামে পড়ুয়াদের মেধা বিকশিত হয় না। চাপে থাকে। তাই পড়ার আগ্রহ পায় না। এমনকি ফেল করলে চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটায়। লেখকের মতে পলিসি মেকারদের উদ্দেশ্য তাদের সন্তান ও সাধারণ জনগণের সন্তানদের মাঝে মারপ্যাঁচ দিয়ে কাবু করে সাধারণ মানুষের সন্তানদের বেশিভাগদের বিদ্যাবিমুখ করে রাখা। লেখকের নানা টিভি সাক্ষাৎকার দেখেছি। তিনি বলেছেন, সবাই যে ভাবে বলেন তিনি তার উল্টোটা ভাবেন ও বলেন। এ জন্য কেউ তাকে পছন্দ করে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তির পক্ষে চমৎকার কিছু কথা বলেছেন। পার্বত্য চট্টগামে ২৫ বছর যুদ্ধে পাহাড়ি ও বাঙ্গালী মারা গেছে ২০ হাজার। সামরিক বাহিনী ৭০০ জন সদস্য। আরো আছে পুলিশ ও বিডিআরের নিহত ও আহতের ঘটনা। ২৫ বছর আগে থেকে প্রতিদিন পাহাড়ে শুধু মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর লজিস্টিকের পিছনে খরচ ছিল দিনে কয়েক কোটি টাকা। পাহাড়ে সমঝোতা থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ পাহাড়ে বাঁচানো টাকা দিয়েই বিদ্যুৎ ঘাটতি অনেক আগেই মিটাতে পারত। বইটিতে তিনি পাকিস্তান প্রীতিকে পাকিফোবিয়া রোগ বলেছেন। আর একটি রোগ তিনি পেয়েছেন তার নাম "মর্ষকামিতা" এটা হল অত্যাচারিত ও ধর্ষিত হওয়ার পর ধর্ষিত নারী ধর্ষকের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। এই রোগ খুঁজে পেয়েছেন কিছু সংখ্যক পাকিস্তানপন্থী বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা পাকিফোবিয়ায় আক্রান্ত। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ও বাণিজ্যি নেটওয়ার্ক চালুর বিষয়ে জোর মত প্রকাশ করেন। দেশে দেশে বিদ্বেষ কোন উন্নয়ন করে না বরং তা ক্রমাগত আমাদের গভীর তিমিরে নিমজ্জিত করছে। বাঙ্গালী অগ্রগতিতে পিছিয়ে নেই কিছু নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি তা প্রমাণ করে। এছাড়া বাংলাদেশের তিনটি দলের রাজনীতি তার আলোচনায় স্থান পায়। পরিশেষে বলব প্রতিটি আর্টিক্যালে লেখক তার অভিজ্ঞতা ও ভিন্নমতের প্রতিফলন করেছেন। আর সমস্ত ভাবনা সমসাময়িক ভাবনা থেকে আলাদা ফলে বইটির আবেদন ও আকর্ষণ বেড়েছে। আশা করি নতুন প্রজন্মকে চিন্তায় ভিন্নতা দান করবে। বইয়ের পরিশিষ্টে তৎকালীন বিভিন্ন লেখকদের তার উপর সমালোচনা রয়েছে যাও যথেষ্ট সুখপাঠ্য হবে। বইটি ভাল লেগেছে। লেখকের আরো আর্টিক্যাল পড়ার আগ্রহে রইলাম। দ্রুততার সাথে বইটি বের করায় বইটিতে বানান ভুল ও ফ্রন্ট বিভ্রাট আছে। পরবর্তী সংস্করনে প্রকাশনী সংস্থা হয়ত সতর্ক হবেন। ড. ফ. র. আল সিদ্দিকের জন্য দোয়া করি বেঁচে থাকার পূর্ব পর্যন্ত যেন মহান আল্লাহতালা ওনাকে লেখালেখির মধ্যে বহাল রাখেন।
লেখকের নাম না জানারই কথা। কারন আমরা গুনী লোকের কদর তেমন একটা করতে শিখিনি। তবে উনার পরিচিতি পড়লে বুঝতে পারবেন,গুনী লোক কেন বলা হল। সাম্প্রতিক সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি দেখলে এখন আশা করা যায় আমরা সবাই তাকে চিনব। বইটি মূলত কতগুলো প্রবন্ধের সম্মেলন। আমরা জানি কিছুদিন আগেই 'জয় বাংলা' কে আদালত আমাদের জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন। অথচ, লেখক বহুবছর আগেই এর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন যা তার 'জয় বাংলা, আমাদেএ জাতীয় জয়ধ্বনি ' প্রবন্ধে ফুটে উঠেছে। লেখক দেখিয়েছেন যে,আমরা বাঙালীরা বিভক্তিবাদে খুব বেশি বিশ্বাসী। আর তাই আমরা আমদের জাতির পিতা,জাতীয় নেতা,জাতীয় বীর এমনকি মুক্তিযুদ্ধের মত জাতীয় ইতিহাসকে দলীয়করণের মাধ্যমে বিভক্ত করেছি। এছাড়াও এই বইয়ে আরো এসেছে,আমাদের বাংলা ভাষার কিছু অবৈজ্ঞানিক দিক,কক্সবাজারের ইতিহাস ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র, পাকিস্তান প্রীতি এবং ভীতি, বাঙালীর নোবেল জয় এ সফলতা ও ব্যর্থতা আরো নানা বিষয়। বইটিএ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা ও তার শান্তিপূর্ণ সমাধান বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে যা আমাদের প্রজন্মের জন্য জানা আবশ্যক। এই বইটিতে একটি বার্তা আমাদের জন্য দেয়া হয়েছে,তা হলো যে আমাদের জাতি হিসেবে যে ব্যর্থতার ইতিহাস রয়েছে তাও জানতে হবে সেসব শিক্ষা নেয়ার জন্য এবং ভবিষ্যতে যাতে সেই ভুল গুলো পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য। এবং বর্তমান তরুন প্রজন্মের জন্য 'সেতুবন্ধ' প্রবন্ধটি পড়া আবশ্যক কারন এতেই লেখক আমাদের জন্য দিয়েছেন দেশ গড়ার,বাঙালী জাতিকে গৌরবান্বিত করার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা।
বইটি মুহূর্তে মূহুর্তে মনে করে দেবে আপনার আমার ইতিহাস সংস্কৃতি ছিল আমার এখোন কি নিয়ে পড়ে আছি। বাংলাভাষা ভাষা সংস্কৃতি ফুটেউঠেছে। বইটি চিত্তাকর্ষক বই
বাঙালির জয় বাঙালির ব্যর্থতা বইটি লিখেয়েছেন ড. ফ. র. আল সিদ্দিক লাইব্রেরিতে গিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে সুপাঠ্য বই খুঁজছিলাম। চোখের সামনে লালছে কভারের এই বইখানা পড়ল। ঠিক লাল নয় তবে কিছুটা ঐ ধরনের। নাম "বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা"। উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখলাম বটে। মনে হচ্ছে সুপাঠ্য হবে! অাপনি যদি জ্ঞান পিপাসু হয়ে থাকেন, বই পড়েন কিছু জানার আগ্রহে তবে এই বইটি অবশ্যই আপনার জন্য। নিছক আনন্দ প্রমােদের। জন্য নয়, বইয়ের পাতা উল্টিয়ে যান অার অাপনার মনের ভাবনার জগৎকে উন্মুক্ত করুন। বইয়ের পরতে পরতে থাকা বহুমুখী বিষয় মনকে তৃপ্ত করবে বলে মনে হল। মানুষ হিসাবে অামরা হিন্দু নয়, মুসলিম নয়, অামরা বাঙালি। বইটা পড়তে হবে, দেখতে হবে কিসে এই বাঙালির জয় ঘটেছে অার ঠিক কি কারণে বাঙালির এত ব্যর্থতা