বিশিষ্ট পণ্ডিত ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক। শুধু রম্যরচনাই নয়, ছোটগল্প, উপন্যাস, অনুবাদ, ভ্রমণকাহিনী সাহিত্যের ইত্যাদি বিশেষ শাখায় রচিত সৈয়দ মুজতবা আলী এর বই সমূহ অর্জন করেছে বিশেষ খ্যাতি। বিশেষ করে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোর জুড়ি নেই, যেগুলো পাঠকদের কাছেও ব্যাপক সমাদৃত। বিখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯০৪ সালে, সিলেটের করিমগঞ্জে। পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী। শান্তিনিকেতন থেকে স্নাতক ১৯২৬-এ। এরপর আফগানিস্তানে কাবুলের শিক্ষাদপ্তরে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় অধ্যাপক হিশেবে যােগ দেন। দুবছর পরে স্কলারশিপ নিয়ে যান জার্মানির বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩২ সালে। ইউরােপ, এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে কর্মসূত্রে সঞ্চয় করেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ১৯৩৪-৩৫ সালে পড়েন কায়রাের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর বরােদায়। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপনায় যােগ দেন। দেশ বিভাগের পরে চলে আসেন জন্মভূমি তকালীন। পূর্ব-পাকিস্তানে ১৯৪৭ সালেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে বক্তৃতা করেন সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে। ১৯৪৯-এ অধ্যক্ষ হিসেবে যােগ দেন বগুড়া আজিজুল হক কলেজে। এখানে থাকাকালীন বাংলাভাষার সমর্থনে লেখেন পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' শীর্ষক প্রবন্ধ। সরকার কৈফিয়ত তলব করলে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে যান ভারতে। স্বল্পসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরি শেষে যােগ দেন আকাশবাণীর উচ্চপদে, পরবর্তীতে বিশ্বভারতীর ইসলামি সংস্কৃতির প্রধান অধ্যাপক হিসেবে। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন বহুভাষাবিদ। ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান ইত্যাদি ইউরােপীয় ভাষা ও আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত, গুজরাটি, মারাঠি ইত্যাদি প্রাচ্য ও ভারতীয় সহ মােট পনেরােটি ভাষা জানতেন তিনি। বহু ভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলা রসরচনায় মৌলিক অবদানের জন্য অবিস্মরণীয়। উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ‘দেশে বিদেশে’, ‘শবৃনম’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘হিটলার’, ‘চাচা কাহিনী', ‘ধূপছায়া’, ‘জলে ডাঙায়’, ‘মুসাফির’, ‘পঞ্চতন্ত্র, ‘অবিশ্বাস্য’, ‘ভবঘুরে ও অন্যান্য’, ‘টুনিমেম', ইত্যাদি। ১৯৪৯-এ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নরসিংহদাস সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত হন। বাংলাদেশে ফেরেন ১৯৭২-এ ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪-এ জীবনাবসান বাংলাদেশেই। সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিশেবে পান একুশে পদক ২০০৫ (মরণােত্তর)।