শওকত রাজনীতি বোঝে না। সে গ্রামের ছেলে। অত্যন্ত মেধাবী। বুয়েটের পরীক্ষায় সে বেশ ভালো করে। পাস করে বুয়েটেরই শিক্ষক হবে। সেই শওকতেরও শরীরে ও মনে একটা ব্যথা আছে- অসাস্প্রদায়িক শিক্ষানীতির দাবিতে ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিল, তখন এরশাদ সরকারের পুলিশ তার পা ভেঙে দিয়েছে। মাকসুদার রাহমান কবি হতে চায়। তার কবিতার প্রেরণা আর্কিটেকচারের মেয়ে মৌটুসি। প্রেমের কবিতা লিখতে লিখতে সে-ও যুক্ত হয় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে। ন্যাভাল আর্কিটেকচারের আবীর পত্রমিতালির সূত্র ধরে প্রেম করে শানুর সঙ্গে, হলের রুমেই একদিন আবীর আবিষ্কার করে শানুর পেটে সিজারিয়ানের দাগ। শহীদ হন রাউফুন বসুনিয়া। বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে বুকের রক্তে রাজপথে গণতন্তের দাবি লেখেন নূর হোসেন। কবিতা ও কৃষ্ণচূড়া ভালোবসেতেন যে ডাক্তার মিলন, আড়াই বছরের মেয়ে শামাকে রেখে যান আন্দোলনে, আর ফিরে আসেন না। আলাদা আলাদা মানুষ, কিন্তু সবাই মিলেছে রাজপথে, ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে, স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোয়।
আনিসুল হক
আনিসুল হক ৪ মার্চ ১৯৬৫ সালে রংপুরের নীলফামারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর কারমাইকেল কলেজ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই সাহিত্য ও সাংবাদিকতার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল, এবং তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেও ১৫ দিনের মধ্যে সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিকে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সিটি আনন্দ-আলো পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী পদক, সুকান্ত পদক, এবং ইউরো সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা লাভ করেছেন।