বহুব্রীহি
বইবাজার মূল্য : ৳ ২৭৩ (২২% ছাড়ে)
মুদ্রিত মূল্য : ৳ ৩৫০
প্রকাশনী : আফসার ব্রাদার্স
বিষয় : সমকালীন-উপন্যাস , হুমায়ুন মেলা
বুক রিভিউ : "বহুব্রীহি" লেখক :- হুমায়ূন আহমেদ ঘরানা :- উপন্যাস প্রকাশনী :- আফসার ব্রাদার্স পৃষ্ঠা সংখ্যা :- ১৯২ বহুব্রীহি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের একটি জনপ্রিয় উপন্যাস। এই বইটি সম্পূণ্য ব্যতিক্রিম। কেননা আগে স্ক্রিপ্ট তৈরী করা হয় তারপরে নাটক বা সিনেমা তৈরী করা হয়। বহুব্রীহি আগে নাটক তারপরে উপন্যাসে রূপান্তর করা হয়েছে। উপন্যাসটি একটি বাড়ীর সদস্যদের নিয়েই তৈরী হযেছে। বাড়ীটির নাম নিরিবিলি। বাড়ীর কর্তা সোবাহান তিনি পেশায় ওকালতি করতেন। তিনি ছাড়াও ছিল তার স্ত্রী মিনু। তাদের মেয়ে বিলু হচ্ছে বড় ও তাদের ছোট মেয়ে হচ্ছে মিলি। বিলু ও মিলি মামা হচ্ছে ফরিদ তার পরে আছে মনসুর আহমেদ নামের একজন ডাক্তার তাদের বাড়ীর কাজের ছেলে হচ্ছে কাদের ও কাজের মহিলা হচ্ছে রহিমার মা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আনিস ও তার দুই ছেলে মেয়ে টগর ও নিশা। সবশেষে আসে এমদাদ ও তার নাতনী পুতুল। সোবাহান সাহেব নানা রকম উদ্ভত কাহিনী করে। যেমন বাজারে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না তাই তিনি মাছে নিয়ে গবেষণা করেন। সেটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে তাকে পাগলও বলা হয়। সে জন্য তার অসুস্থ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। আরও একবার ক্ষুধার স্বরূপ জানার জন্য খানাপানি বন্ধ করে। সবাই তখন চিন্তিত হলেও সোবাহন সাহবে কিছুই মুখে দিচ্ছে না। পড়ে আনিস সাহেব কিছু একটা বলার পরে তিনি তার সেই অনশন ভাঙ্গে। আবার একবার বাড়ীতে সত্য দিবস করা হবে। সেদিন সবাই সারাদিন সত্য বলবে। ইত্যাদি নানা রকম উদ্ভুত কাহিনী চলতে থাকে তার সেই বাড়িতে। বাড়ীর সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যক্তি হচ্ছে বিলু ও মিলির মামা। অবশ্য বিলু তার মামাকে অনেক পছেন্দ করেন। সারা দিন তার দুলাভাই মানে সোবাহান সাহেবকে নানা রকমভাবে বিরক্ত করাই যেন তার কাজ। তার দুলাভাইয়ের জন্য একটি ছোট টেলিফ্লিম বানাতে চায় তার নাম হে মাছ, সেখানে মিলি ও ডাক্তার নায়ক নায়িকার থাকবে আর কাদের থাকবে জেলে। আবার পরে 'ক্ষুধা হে' নিয়েও একটি নাটক বানাতে চায় এসব নিয়েই নানা রকম কাহিনী চলতে থাকে। এজন্য অনেক সময় সোবাহান সাহেব তার উপর মারাত্মক রাগ হয়। তারপরে একসময় তাকে সেই বাড়ী থেকে বের হওয়ার জন্যও বলেন। তারপরে ফরিদ ও কাদের বাড়ী থেকে বের হলে নানা রকম কাহিনী ঘটতে থাকে। তারা কমলাপুর রেলস্টশনে কাটাতে থাকে। পরে কাদের ছিনতাই করলে ফরিদও পুলিশের কাছে ধরা পরে তারপরে সোবাহান সাহেব তাদের কে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। মিলি হচ্ছে বাড়ীর ছোট মেয়ে। সে একটা ইউনিভাসিটিতে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করে। মিলিকে মনসুর নামের একজন ডাক্তার অসম্ভব ভালোবাসে কিন্তু সেটি তার সামনে বলতে পারে না। প্রথম দিন যেদিন নিরিবিলি বাড়ীতে আসে এই ডাক্তার সেদিন তো সিড়িতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে হয়েছিল। একদিন তো মিলির বড় বোনকে তার প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। পরে তার সেকি লজ্জা। অন্যদিকে বাড়ীর বড় মেয়ে বিলু হচ্ছে বরিশাল মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। কলেজ বন্ধ হলে বাড়ীতে এসে পরিচয় হয় আনিস সাহেবের সাথে। আনিস হচ্ছে তাদের বাড়ীর ভাড়াটিয়া। বিলু আনিস সাহেবের ছেলে মেয়েকে অসম্ভব ভালবাসে। একদিন তো তার মেয়ে তার বাবার নামে মিথ্য বলে যে, তার বাবা তাকে বিয়ে করবে। পরে আনিস সাহেব সেকি লজ্জা পায়। পরে অবশ্য বিলু আনিসের প্রেমে পড়েন। পরে বিলুকে বরিশাল পাঠিয়ে দিতে বলে সোবাহান সাহেব সেখানে লঞ্চের মধ্যে বিলু আনিস সাহেবকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। পরে তারা বিয়েও করে বাড়ীতে চিঠি দেয় কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। তারপরে বাড়ীতে আসে এমদাদ ও তার নাতনী পুতুল । এমদাদ সাহেব এসেছেন তার নাতনীর একটি গতি করার জন্য। সে সবে মাত্র এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে। সেই আশাতেই এই নিরিবিলি বাড়ীতে তার আগমন। এমদাদ সাহেব ডাক্তার আনিস কে ভাল ভাবে তার নাতিনকে লেলিয়ে দেয়। পরে অবশ্য তার নাতনী সেটি বুঝতে পারে যে মিলি আর ডাক্তারের মধ্যে একটি সর্ম্পক আছে। অন্যদিকে পুতুল আবার আনিস সাহেব ভালবাসে সে কথাটিও আনিসকে শুনতে হয়। পরে অবশ্য সব ঠিক হয়। এরমধ্যে সোবাহান সাহেব তার শালাকে মানে ফরিদকে অনেক টাকা দেয়। কেননা সোবাহান সাহেবের শ্বশুর তার কাছে অনেক টাকা রেখে বলে যায় তার মাথা ঠিক হলে যেন সেই টাকা তাকে দেওয়া হয়। তো সেই টাকা এখন প্রচুর টাকায় পরিনত হয়েছে। যখন তাকে সেই টাকা দেওয়া হলো এখন আর ফরিদের কোনকিছু ভালো লাগে না। একদিন হঠাত করে মিলি তার বাড়ীতে টেবিলির উপর তার মাকে একটি চিঠি লেখে বলে সে ডাক্তারকে ভালোবাসে আর তাকে ছাড়া তার জীবন অন্যরকম হচ্ছে যাচ্ছে। তাই সবাই মিলিকে ডাক্তারের সাথে বিয়ে দিতে গিয়ে আরও নানা রকম কাহিনী চলতে থাকে তখন সে বাসায় তার একটি পাঞ্জাবি আছে সেটি আনতে গিয়ে আবার দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। অন্যদিকে বিলুর বিয়ের ব্যাপারও সোবাহান ও তার স্ত্রী কথা বলতে শুরু করলে তার স্ত্রী বলে আনিস ও বিলু আগেই বিয়ে করেছে। শেষের দিকে ফরিদের সেই টাকার একটা ব্যবস্থা হয়। সেই টাকায় একটি মুক্তিযুদ্ধ ট্রাষ্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেখানে সকল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থাকবে। পরে ফরিদ কয়েকটি টিয়া কেনা হয় এখন সারাদিন শুধু এদের তুই রাজাকার, তুই রাজাকার শেখানে হয়। একদিন ফরিদ পাগলের মতো চিল্লাতে চিল্লাতে বললো পাখি কথা শিখে গেছে। তারা স্পষ্ট ভাবে বলছে তুই রাজাকার, তই রাজাকার। এভাবেই শেষ হয় উপন্যাসের। আশা করি এই লকডাউনে প্রচুর বিনোদন পারবে এই বইটি পড়লে। আমি তো মনে মনে হেসে কুটিকুটি 🤗 অবস্থা।