বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় কেবল একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমাত্র নয়। বইটিতে বর্ণিত সময় এবং ঘটনা প্রবাহে লেখকের অবস্থান তাঁকে ইতিহাসের এমন একটি পর্বের প্রত্যক্ষদর্শীতে পরিণত করেছে, যে কালপর্ব নিয়ে আমাদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
বইটির প্রায় সমান দুইটি ভাগ: ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং ‘বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়'। বইটির সূচনা হয়েছে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভােটারদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির বর্ণনা দিয়ে। কীভাবে রসায়নে পিএইচডিধারী মফিজ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকতা ছেড়ে দেশে শিল্প গড়ায় সহায়তা করার বাসনায় ফিরে এলেন, আমলাতান্ত্রিকতার প্রতিবাদে চাকরি ছাড়লেন, নিজেই শিল্পদ্যোক্তা হলেন, অবশেষে আইয়ুব বিরােধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়লেন, '৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করলেন, তারই বিবরণ এই অংশটি।
গ্রন্থটির দ্বিতীয়াংশে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে মন্ত্রিসভায় অংশ নেয়ার আহ্বান পাওয়া এবং বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের নানান উদ্যোগ, সেগুলাের সাফল্য ও ব্যর্থতা, ক্ষেত্র বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের । আকাক্ষার সাথে পরিস্থিতির অসঙ্গতি এবং মন্ত্রিসভার অভ্যন্তরে বিভিন্নমুখী প্রবণতা ও কোন কোন বিষয়ে মতদ্বৈধতার বিবরণ মিলবে। অন্তরঙ্গ বিবরণ মিলবে। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের, জটিলতাগুলাে কীভাবে দানা বেঁধেছিল, সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব ভাষ্য ও বিবরণও পাওয়া যাবে। সঙ্গতকারণেই এই সময়ের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিষয়ে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য চিন্তার রসদ যােগাবে মফিজ চৌধুরীর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়।
মফিজ চৌধুরী
বগুড়া জেলার জয়পুরহাটে মফিজ চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে। তিনি তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন বগুড়া জিলা স্কুল, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেষােক্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে রসায়ন শাস্ত্রে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পরে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার্থে ১৯৪০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। চার বছর পর পেনসিলভানিয়ার লিহাই ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে। কিছুকাল শিক্ষকতা এবং জাতিসংঘে কিছুদিন কাজ করার পর ১৯৫১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, নিযুক্ত হন। পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প বিভাগে উপ-পরিচালক হিসেবে। ১৯৫৮ সালে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তেজগাঁও। শিল্পাঞ্চলে ইস্ট পাকিস্তান সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে তাঁকে জয়পুরহাট-পাঁচবিবি-ক্ষেতলাল থেকে গণপরিষদে প্রার্থিতার মনােনয়ন দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি । সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য নিযুক্ত হন। এবং দুই বছরের কিছু বেশি সময় এই পদে কর্মরত থাকেন। ১৯৯৩ সালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। দেশপ্রেমিক এই বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও রাজনীতিক প্রাচীন গ্রীক নাটক ও শেক্সপীয়রের বেশ কয়েকটি নাটকের বঙ্গানুবাদের জন্য উভয় বাংলার সুধী মহলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর অনুদিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে মার্চেন্ট অব ভেনিস, জুলিয়াস সিজার, হ্যামলেট, রােমিও জুলিয়েট ইত্যাদি। এছাড়া তার কিছু প্রবন্ধের বইও রয়েছে ।