ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ইসতামবুলে-অনেকেই ইস্তাম্বুল লেখেন, হয়তো সেটাই সার্বিক বানান, কিন্তু ইচ্ছে করেই অপ্রচলিত বানান ব্যবহার করেছেন লেখক উচ্চরণের সঙ্গে মিল রেখে। ইসতামবুল পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীনতম নগরী যার ভূগর্ভের পরতে পরতে রয়েছে একাধিক সভ্যতার প্রত্নতাত্তিবক নিদর্শন, প্যাগান, রোমান, খ্রিস্টান,মলমূক, অটোম্যান, ইত্যাদি। এত অসংখ্য প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন ভগ্নপ্রায়,অর্দভগ্ন এবং প্রায় সম্পূর্ণ খুব কম নগরীতেই দেখা যায়। এক ভ্রমণের ইসতামবুলের সব কিছু দেখে শেষ করা যায় না।
লেখক ইসতামুলে গিয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেখতে, যদিও সে তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতার অংশ হয়ে গিয়েছে। তিনি ইসতামবুলে এবং পরে কোনইয়া শহরে গিয়েছিলেন সুফি কবি মেভলানা জালালউদ্দিন রুমীর অনুসারী ঘুরন্ত দরবেশদের (হুইলিং ডার্ভেস) নাচ গান করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করবার এবং নিবেদনের প্রার্থনাভবন (সেমা) দেখতে। কামাল আততুর্ক ক্ষমতায় এসে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে মেভলানা রুমীর বিশেষ উপসানালয়ে দরবেশদের প্রচন্ড বেগে ঘুরে ঘুরে নাচ-গান বন্ধ করে দেন। এখন এই সব উপসানালয় (সেমা) সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। ইসতামবুলে এমন সেমা দুইটি আছে যার মধ্যে একটি বেশ কষ্ট করে খুঁজে বের করেন লেখক।তাঁর এই ভ্রমণকাহিনী একই সঙ্গে একটি দেশের ভূগোল, ইতিহাস, রাস্তায় দেখা নর-নারী , দর্শনীয় কিছু স্থানের বর্ণনার সংঙ্গে আধ্যাত্নিক জগতের অনুসন্ধানও বটে।
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।