মুফাক্কিরে ইসলাম হযরত মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-কে আল্লাহপাক এ আখেরী যমানায় দ্বীনের যে বহুমুখী খেদমতের তাওফীক দিয়েছেন এবং তাঁর যবান ও কলম সমগ্র আলমে-ইসলামজুড়ে বরং অমুসলিম সমাজেও দ্বীনী দাওয়াত যে হৃদয়গ্রাহী পন্থায় দিয়েছে সে সম্পর্কে কোনো সচেতন মুসলিম অনবহিত নন।
আল্লাহপাক হযরত মাওলানাকে উম্মতের প্রতি এমন দয়ার্দ্র্যচিত্ত বানিয়েছিলেন যে, পতনের এ যুগে তিনি উম্মাহর গাফলত ও আত্মঘাতী অবস্থা দর্শনে অস্থির হয়ে পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রেই ছুটে গিয়েছেন। অন্তরের সবটুকু দরদ দিয়ে মুসলমানদেরকে গাফলতের নিদ থেকে জাগিয়ে আত্মসচেতন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। ফলে যে দেশের যে মানুষই হযরত মাওলানা রচিত কিতাবসমূহ ও তাঁর মুখ নিঃসৃত শত-সহস্র বয়ান থেকে যৎসামান্য পাঠের বা শ্রবণের সুযোগ লাভ করেছে, তার অন্তরাত্মা কিছু সময়ের জন্য হলেও জাগ্রত হওয়ার প্রেরণা অনুভব করেছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রহ.-কে কুরআন-সুন্নাহর অগাধ ইলম যেমন দান করেছিলেন, তেমনি বিস্ময়করভাবে তাঁকে ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের নিখুঁত কর্মপন্থা নির্ধারণের যোগ্যতাও দিয়েছিলেন পূর্ণরূপে। ফলে তিনি উম্মাহর করণীয় ও অবশ্যকরণীয় বাতলে দিতেন সূক্ষ্মদর্শী অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতো। তাঁর বাতলানো পথ-পন্থা অবলম্বন করতে পারলে উম্মাহর পতন ও অধঃপতন রোধ করে পুনরায় নেতৃত্বের হারানো আসন ফিরে পাওয়া এবং সমগ্র বিশ্বকে পচন ও পতন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তব, আমরা হযরতের কলজে ছেঁচা আর্তনাদ ও আহ্বানে সাড়া দিতে ব্যর্থ হচ্ছি...। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে উম্মাহর এ সকল রাহবারের সতর্কীকরণ ও আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদেরকে সংশোধন করার ও নেতৃত্বের আসনে পুনরায় আসীন হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ.
আল্লাহর পথের এক মহান দাঈ, ইলমে ওহীর বাতিঘর। যুগশ্রেষ্ঠ মনীষী। খাঁটি আরব রক্তের গর্বিত বাহক। বিশ্বময় হেদায়াতের রােশনি বিকিরণকারী। উম্মতের রাহবার ও মুরব্বি। কল্যাণের পথে আহ্বানে চিরজাগ্রত কর্মবীর।
জন্ম ১৯১৪ ঈসাব্দে। ভারতের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার সূতিকাগার উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনৌর রায়বেরেলীতে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া আদ্যোপান্তই দারুল উলুম নদওয়াতুল ওলামায়। অধ্যাপনা জীবনের সিংহভাগও এই প্রতিষ্ঠানেই নিবেদিত ছিল। । আল্লামা নদভীর খ্যাতির সূচনা হয় বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকে; সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ রচনার মাধ্যমে। গ্রন্থটি গােটা ভারতবর্ষে তাঁকে পরিচিত করে তােলে। এরপর তিনি রচনা করেন মা যা খাসিরাল আলাম বিনহিতাতিল মুসলিমীন নামক কালজয়ী গ্রন্থ। যা তাকে প্রথমত আরববিশ্বে ও পরবর্তীতে বৈশ্বিক সুখ্যাতি এনে দেয়। এ পর্যন্ত গ্রন্থটির শত শত সংস্করণ বেরিয়েছে।
বিগত প্রায় পৌনে এক শতাব্দী ধরে তাঁর কলম অবিশ্রান্তভাবে লিখেছে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অধ্যায়গুলোর ইতিবৃত্ত। সীরাত থেকে ইতিহাস, ইতিহাস থেকে দর্শন ও সাহিত্য পর্যন্ত সর্বত্রই তার অবাধ বিচরণ । উর্দ থেকে তার আরবী রচনাই যেন অধিকতর অনবদ্য। আল্লামা নদভী জীবনে যেমন পরিশ্রম করেছেন, তেমনই তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সদস্য ছিলেন। তিনি একাধারে রাবেতায়ে আলমে ইসলামী এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, লখনৌর বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম নাদওয়াতুল-উলামা-এর রেকটর এবং ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম মুসলিম পার্সোন্যাল ল বাের্ডের সভাপতি ছিলেন।
ইসলামের এই মহান সংস্কারক ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর জুমার আগে সুরা ইয়াসীন তিলাওয়াতরত অবস্থায় ইনতিকাল করেন। সাত খণ্ডে রচিত তারিখে দাওয়াত ও আযীমত তার। আরেকটি কালজয়ী রচনা যার অনবদ্য অনুবাদ সংগ্রামী সাধকদের ইতিহাস। বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে বইটির সার্থক অনুবাদ তুলে। দিতে পেরে আমরা আল্লাহর শােকরিয়া আদায় করছি।
Title :
হেদায়েত ও তাবলীগ (ভাষণসমগ্র-৩) (হার্ডকভার)