কবি জাকির জাফরান এর পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ 'জোৎস্নাসম্প্রদায়' প্রকাশ পাচ্ছে। প্রকাশিতব্য এই কাব্যগ্রন্থের পাণ্ডুলিপি পাঠ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি . জাকির জাফরান শুধুই কবি নন, তিনি খুবই শক্তিশালী একজন কবি। তাঁর কাব্যগ্রন্থের জন্য নির্বাচিত নাম-'জ্যোৎস্নাসম্প্রদায়' তাঁর কল্পনাশক্তির পারদর্শিতাকে প্রকাশ করে। জ্যোৎস্নাকে বাংলা কবিতায় বহুবার বহুভাবে ব্যবহৃত হতে আমরা দেখেছি কিন্তু জ্যোৎস্নাকে সপ্রাণ-সম্প্রদায় হিসেবে, তাঁর আগে কোনো কবিকে ভাবতে দেখেছি, এমনটি মনে পড়ছে না। বাংলা কবিতার ইতিহাসে 'জ্যোত্রাসম্প্রদায় এমন একটি কবিতার বই-যেখানে বাঙ্গালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, লোকজ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বাংলার রাজনৈতিক কাঠামো, বাঙ্গালির বীরত্বগাথা ও রাষ্ট্রচিন্তা, চর্যাপদের আবহ, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ঘটনাবলী, বাংলার আলোকস্তম্ভল্য ব্যক্তিদের নাম ও কর্ম, বাংলার কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের আবহমান বেদনা, প্রেমের সঙ্গে কৃষি ও মিথের আশ্চর্য মিথস্ক্রিয়া, ধর্ম, সুফিবাদ ও বাউলিয়ানা, সর্বোপরি শক্তি ও সৃজনের প্রতীক এক নারী চরিত্রকে কেন্দ্রে রেখে নারী জাগরণের স্বপ্নের ওপর ক্রমাগত জ্যোৎস্নার প্রক্ষেপণ- এই সবক'টি বিষয়ের প্রাণময় সম্মিলন ঘটেছে মাত্র একটি কবিতাগ্রন্থে। জাকির জাফরান কৃষককুলের আনন্দ-বেদনার ছবি যে দক্ষতার সঙ্গে বাণীবদ্ধ করেছেন- যেসব স্মরণযোগ্য চিত্রকর তিনি রচনা করেছেন, আমার কাছে তা অভিনব এবং খুবই আনন্দময় বলে মনে হয়েছে। তার কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি “যেদিকে শ্যামলা নারী ধান্য পায়ে নিত্য হেঁটে যায়, ওগো সাঁই, প্রেমের মোকাম জানি সেই মথুরায়।” প্রায়বিলুপ্ত আঞ্চলিক শব্দভাণ্ডারকে কাব্যভাষায় যেভাবে তিনি স্বতঃস্ফূর্ত সংযুক্তি ঘটিয়েছেন তা রীতিমতো বিস্ময় দাবী করে। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ৪৪-৪৬, ৪৯-৫১, ৫৪, ৫৫ সংখ্যক কবিতাগুলো। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার দীর্ঘ সংগ্রাম, ছয় দফা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এক অনিন্দ্য চিত্রকল্পও আমি খুঁজে পেলাম তার কাব্যভাষায়। আমি জ্যোৎস্নাসম্প্রদায়ের কবি জাকির জাফরানকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আপনার জয় হোক। শুভার্থী নির্মলেন্দু গুণ ১৮/১০/২০