ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ সোনার মূর্তি প্রিয় কিশোর বন্ধুরা, আমি কিশোর পাশা বলছি, শখের গোয়েন্দা। শোনে , খবর পেয়েছি রহস্যময় এক সোনার মূর্তি নাকি রয়েছে পরিত্যক্ত এক ভূতুড়ে প্রাসাদে, যেটাকে পাহারা দিয়ে রেখেছে চারটে কুকুরের প্রেত। বিশ্বাস হলো না, তাই না? আমারও হয়নি। তাই আমার দুই সহকারী রবিন আর মুসাকে নিয়ে কেসটা তদন্ত করতে যাচ্ছি। সাহস থাকলে চলো আমাদের সঙ্গে, চেষ্টা করে দেখি সবাই মিলে এই জটিল রহস্যটার সমাধান করতে পারি কি না।
দুঃস্বপ্নের রাত বন্ধুরা, আমি রবিন। অদ্ভুত এক গল্প শোনাতে চাই তোমাদের। এক ঝড়তুফানের রাতে গিয়েছিলাম এক পিশাচের বাড়িতে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পেলাম পিশাচটার। আর তারপর থেকেই শুরু হলো আমার প্রাণ হাতে নিয়ে পালানো।
দুর্গম বনের যাত্রী বন্ধুরা, আমি মুসা বলছি। শখের গোয়েন্দা মুসা আমান। আমাদের গোয়েন্দাগিরির অনেক গল্পই তো পড়েছ, এবার একটা ভিন্ন ধরনের গল্প শোনাই। আমার ‘রবিনসন ক্রুসো’ হওয়ার গল্প। কুমির, সাপ, আর নানা ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার গল্প।
রকিব হাসান
রকিব হাসান বলেন আমার কাজটাই হলো যেটা তুঙ্গে ওঠে, সেটা ছেড়ে দেওয়া। তিনি আরো বলেন লিখেছি অনেক, এত জনপ্রিয় হবো ভাবিনি।
রকিব হাসান বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা ও কিশোর-কিশোরীদের সেরা পছন্দের লেখকদের শীর্ষ তালিকার একজন। তাঁর মাধ্যমেই বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীরা গোয়েন্দা কাহিনি ও তিন গোয়েন্দা সিরিজের সাথে পরিচিত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি বহু ক্লাসিক ও কিশোর রোমহর্ষক সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লেখালেখির দীর্ঘ ৫০ বছরে চারটি প্রজন্ম অতিবাহিত হলেও আজও তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। মূলত তিনি নিজেকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন বিধায় মিডিয়ায় তাঁর উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবুও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশ বিদেশে তাঁর লক্ষ লক্ষ পাঠকশ্রেণি রয়েছে। যাদের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী এবং পরবর্তী প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের কাছেও রকিব হাসান অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখক। বর্তমান প্রজন্মের পাঠক-ভক্তদের কাছেও ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্রটি অসম্ভব জনপ্রিয়। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও কিশোর-কিশোরীসের সেরা পছন্দের এই গুণী লেখকের। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর; কুমিল্লায়। তবে বাবার বদলির চাকরির সুবাদে ছেলেবেলা কেটেছে ফেনীতে। ফেনী থেকেই স্কুলজীবন শেষ করে তিনি ভর্তি হন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে নিয়মমতো যোগ দিয়েছিলেন চাকরিতেই। কিন্তু কোথাও মন টেকেনি বেশি দিন। তাই একে একে বদলেছেন বেশ কটা চাকরি। অনেক চেষ্টার পরও অফিসের বাঁধাধরা নয়টা-ছয়টার ঘড়ির কাঁটায় আটকে থাকতে পারেননি। অবশেষে সব ছেড়েছুড়ে লেখালেখি শুরু করলেন একদিন। লেখক সত্তার সঙ্গেই নিজের অচ্ছেদ্য বন্ধন টের পেলেন। তারপর তো লেখালেখিকে বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। হলেন পুরোদস্তুর লেখক। আজ কয়েক প্রজন্মের পাঠকের কাছে জনপ্রিয় তিনি। লেখালেখির শুরুটা সেবা প্রকাশনীতে। বিশ্বসেরা ক্লাসিক বইয়ের অনুবাদ দিয়ে শুরু করেছিলেন। মূলত এক সময়ে পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত স্বনামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে বেস্টসেলার ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। আজও তাঁর প্রকাশিত বইগুলো সমান জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সকল কিছুকে ছাপিয়ে তাঁর ‘তিন গোয়েন্দা সিরিজটি’ এবং ‘কিশোর, মুসা, রবিন’ চরিত্র কালজয়ী জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। স্বনামে-বেনামে ও ছদ্মনামে এই তিন ক্যাটাগরিতেই তাঁর জনপ্রিয়তায় কোন ছেদ পড়েনি। তিনি সকল ধরনের মিডিয়া ও প্রচার প্রচারণাকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করতেন বলে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লেখকের ফেসটি তেমন পরিচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবতায় দেখেছি যে, যখন কোন পাঠক একটু জানতে পেরেছেন যে, রকিব হাসান বইমেলায় অমুক প্রকাশনীতে আছেন, তখন একে একে নিমিষেই প্রচÐ ভীড়ের সৃষ্টি হতো। এমনকি পাঠকের ভীড়ে তাঁকে খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে যেতো। এই গুণী লেখকের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় পাঁচ শতাধিক। তাঁর লেখা প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে, ছদ্মনামে। স্বনামে প্রথম প্রকাশিত বইটি ছিল অনুবাদগ্রন্থ, ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’। এরপর অনুবাদ করেছেন জুল ভার্ন, জিম করবেট, কেনেথ অ্যান্ডারসন, মার্ক টোয়েন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন, হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড, ফ্রেড জিপসন, রেনে জুঁইঅ, এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মত বিখ্যাত লেখকদের অনেক ক্লাসিক বই। অনুবাদ করেছেন মহাক্লাসিক ‘অ্যারাবিয়ান নাইটস’ ও এডগার রাইস বারোজ- এর ‘টারজান’ সিরিজ। তাঁর লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে ছোটদের নিয়ে রচিত ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজটি। এই সিরিজের তিনটি মূল চরিত্র ‘কিশোর-মুসা-রবিন’কে নিয়ে লিখেছেন আরও তিনটি সিরিজ ‘তিন বন্ধু’, ‘তিন কিশোর গোয়েন্দা’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’। লিখেছেন ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ, জাফর চৌধুরী ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ এবং আবু সাঈদ ছদ্মনামে ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ। এ ছাড়া কিশোরদের জন্য বেশ কিছু ভূতের বই ও সাইন্স ফিকশনও লিখেছেন তিনি। তাঁর লেখা কিশোর-কিশোরীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে এবং সেরা বিনোদন যোগায়।
রকিব হাসান এর বই সমূহ
তিন গোয়েন্দা ভলিউম, কিশোর মুসা রবিন সমগ্র, মায়াসুড়ঙ্গ : সাইন্স ফিকশন, হাইপারসনিক রহস্য, রহস্যের দ্বীপ, আরব্য রজনীর গল্প ইত্যাদি।