ভূমিকা কলমের কালি এখনো শুকোয় নি আমার, চিত্রের পর চিত্র এখনো আছড়ে পড়ে করোটিতে, এই মধ্যে ফরমাশ এলো, ‘কবিতাসমগ্র’ করবার। সমগ্রের শুরুটা করা যায় , শেষ এখনো বহুদূরে। জীবন তো থেমে থাকেই না, কলমও নয়। খন্ডে খন্ডে প্রকাশিত হতে চলেছে আমার কবিতা নিয়ে অমগ্রের এই সংকলন। এর আগে ‘ সাতানব্বইয়ের দিকে খানিকটা অন্যমনষ্কভাবেই বেরিয়েছিলো আমার ‘কবিতা সংগ্রহ’ পরে তার দ্বিতীয় খন্ড। এবার এই সংস্করণে ‘সমগ্র’ প্রকাশের অবকাশে ও দুটি পাঠ বর্জিত হলো। নামই কেবল পালটালো না, ভেতরের শাঁসও এখন কিছু কবিতার বদলে গেলো। পর্বে পর্বে আমার যে কবিতার বইগুলো বেরিয়েছে ১৯৬১থেকে, সংকলন করতে বসে তাদের বই নামেই বিভক্ত রাখবার এবং সনাক্ত করবার তখনো দেখি নি, এখনো দেখছি না। একজন কবির কবিতাকে তার অবিছিন্ন সৃষ্টি প্রবাহেই দেখা ভালো। তারপরও ,অগ্রগমন বলে একটা কথা আছে; তাই কিছু কিছু কবিতার নিচে তারিখ দেয়া হলো এবারে। পুরনো খাতাগুলো খুঁজে দেখে যতটা সন্ধান পাওয়া গেছে, তারিখ বসিয়েছি। খাতাগুলো উল্টে আমি আবিষ্কার করে উঠি, কিছু কবিতা ছিল বইয়ে দেবার মতো, বাদ পড়ে গেছে। সে রকম কিছু কবিতা , আগে প্রকাশিত বইয়ের সূচি ভেঙ্গে , যোগ করা হলো এখানে। কবিতা সেই চৌদ্দ বছর বয়স থেকে নিরন্তর লিখছি, যত না লিখেছি বর্জন করেছি তার দ্বিগুন। রচনার তারিখ বসাতে গিয়ে চোখে পড়লো, দীর্ঘ দিনের কবিতা কবিতার বন্ধ্যার সময় দেখছি মাঝে মাঝেই ,কিন্তু আমি জানি , ও -সময়েও খেলা চলছিলো, কিন্তু শোনাবার মতো মনে হয়নি সেসব। বন্ধ্যাত্বটা তাই প্রতারক,ঐতিহাসিক যেন এই কথাটি মনে রাখেন। ‘কবিতাসমগ্র’ করতে বসে আমর একই হাতের এই বিভিন্নতা চোখে পড়েছে আমারই। আশা করি অনেকেই এটি লক্ষ করবেন। সৈয়দ হক ২৭ শে ডিসেম্বর ২০০৬
সৈয়দ শামসুল হক
সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫ - ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক, যিনি কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, অনুবাদসহ সাহিত্যের সব শাখায় অবদান রেখে সব্যসাচী লেখক হিসেবে পরিচিতি পান। তাঁর লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছর ব্যাপী বিস্তৃত ছিল। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন, যা তাঁকে এই পুরস্কারের সবচেয়ে কম বয়সী প্রাপক করে তোলে। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।