ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রাম খেকে রোজগাড়ের অন্বেষণে যুবক নবকুমার রওনা হল ‘ কলিকতার’র দিকে। সঙ্গী যাত্রাজগতের এক মানুষ মাষ্টারদা।চিৎপুরের কোনও যাত্রাদলে নবকুমারকে একটা কাজ জুটিয়ে দিবে। মাষ্টারদা নবকুমারকে নিয়ে এল সোনাগাছিতে , তার পরিচিতি পুরোনোদিনের যাত্রার নামী অভিনেত্রী, ‘শেফালী’মা’র বাড়ি। কে জানে , মনের কোন রসায়নে শেফালি -মা’র ভালো লেগে ছেলেটির । তারপর?....... সমরেশ মজুমদারের জাদুকলমে শুরু হল এক মেগা -উপন্যাস। প্রতিমুহুর্তে সৎ, সত্যভাষী নবকুমারের মনে হতে থাকে এই শহরের সে বেমানান। ‘লালবাতি’ এলাকার মেয়েদের জীবন যন্ত্রনা তাকে রক্তাক্ত করে। পাশাপাশি যাত্রার গদিতে প্রম্পটারের কাজে দক্ষতা তাকে ‘বড়বাবু’র নজরে এনে দেয়। বহে চলে ঘটনাস্রোত। গ্রামের যুবকের চোখ দিয়ে ফুটে ওঠে সোনাগাছির দিনরাত, হাসি-কান্না প্রেম-ঈর্ষা এবং চিৎপুরের যাত্রাদলের নানান টানাপোড়েন। যাত্রার ‘বড়বাবু’র সিনেমার প্রযোজকও। নবকুমার কে তিনি পছন্দ করেন পরবর্তী সিনেমার নায়ক হিসেবে। টালিগঞ্জের নতুন নায়ক হওয়ার অপ্রত্যাশিত সুযোগ। কিন্তু নবকুমার রাজি নয়। সে শুনেছে , সিনেমায় নামলে চরিত্র ‘নষ্ট’ হয়ে যায়। !......তারপর?...... নবকুমার কি শেষ পর্যন্ত মানিয়ে নিতে পারল ‘কলিকাতা’ শহরের সঙ্গে? সমরেশ বলেছেন’....বোধহয় পেরে গেল। “কলিকাতা” তার কাছে“কলিকাতা” হয়ে উঠেছে।....’ সমরেশ মজুমদারেরর ‘কলিকাতায় নবকুমার’ শুধু বৃহৎ নয়, মানবিক মেগা -উপন্যাস।
সমরেশ মজুমদার
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪।
তাঁর শৈশব এবং কৈশাের কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। লেখাপড়ায় মন বসতাে না একদমই। ইচ্ছে ছিল নায়ক হবেন। তাই জলপাইগুড়ির বন্ধুদের নিয়ে সাজাতেন নাটকের দল। বাজারের জন্য দিদিমার দেয়া টাকা বাঁচিয়ে তাও খরচ করতেন বন্ধুদের নিয়ে। ষােলাে বছরের এক তরুণ সমরেশ কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে, বাংলায়। এখানেও শুরু হলাে থিয়েটার আর নাটক লেখা, গল্প লেখার কাজ। নাটক লিখলেও নাটক হতাে না। অভিনয়ও জমছে না ঠিকমতাে। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাসের সার্টিফিকেট জুটলাে কপালে। কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলাে না। এবার নাটক বাদ। গল্প লেখায় সময় ব্যয়। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপা হলাে তাঁর প্রথম উপন্যাস দৌড়। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রকাশিত গ্রন্থ ২১৫।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পান ‘আনন্দ পুরস্কার'। কালবেলা উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে।