সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান লেখক। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি ও সমকালীন ঘটনাবলি নিয়ে তাঁর লেখায় যে চিন্তার প্রতিফলন তিনি ঘটিয়েছেন তা একদিকে বিষয়গুলো নিয়ে নতুন ভাবনার বিস্তার ঘটিয়েছে, অন্যদিকে ভাষাকেও সমৃদ্ধ করেছে অকাতরে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়কে নিয়ে ইতিপূর্বে তাঁর আলোচনা বাংলাভাষায় সাহিত্য সমালোচনায় নতুন আলোকপাত করেছে। বিভাগপূর্ব বাংলা সাহিত্যের আর এক কীর্তিমান পুরুষ কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়েও লেখকের আগ্রহ এবং মৌলিক পর্যবেক্ষণ সুবিদিত। বিভিন্ন সময়েই তিনি নজরুল সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন, বিশ্বসাহিত্য ও দেশীয় প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে নজরুলকে বিচার করেছেন। এই প্রবন্ধসমূহ নানান উপলক্ষে রচিত হলেও তাই তাদের মূল সুর নজরুলেরই মূল্যায়ন, যেন তারা মিলেমিশে একটিই প্রসঙ্গকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বোঝার ও চিনবার চেষ্টা। কাজী নজরুল ইসলাম শুধু তাঁর কাব্যপ্রতিভায় অনন্য ও যুগন্ধর ব্যক্তিত্ব ছিলেন না; সমকালীন রাজনীতি, নতুন সাহিত্যের আন্দোলন, উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম এবং অসাম্প্রদায়িক মিলনের ভাবনা, ঐতিহ্যের অনুসন্ধান ও সাহিত্যে মৌলিক রীতির প্রবর্তনও তাঁকে অনন্য করেছে। সমাজ-রাজনীতি-সাহিত্য চিন্তায় নজরুলের বিপ্লবাত্মক দর্শন তাঁকে যেমন আজও প্রাসঙ্গিক রেখেছে, তেমনি তাঁর হৃদয়স্পর্শী মানবিক সুরটি তাঁকে করেছে চিরকালীন। নজরুলকে চিনতে চাওয়া গ্রন্থে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নজরুলের সেই বর্ণাঢ্য বৈচিত্র্য আর ব্যাপকতাকে বহুদিক দিয়ে যেমন চিনেছেন, তেমনি বাংলাভাষীদের জন্যও আরও বহুকাল ধরে নজরুলকে নিত্যনতুন রূপে চিনবার অজস্র সূত্র উপহার দিয়েছেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম: ২৩ জুন ১৯৩৬, বাড়ৈখালী, বিক্রমপুর) একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক ও সাহিত্যিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্মান (১৯৫৫) ও স্নাতকোত্তর (১৯৫৬) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (১৯৬৮) সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রফেসর এমেরিটাস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে প্রবন্ধ-গবেষণা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও অনুবাদ, যেমন "অন্বৈষণ" (১৯৬৪), "শেষ নেই" (২০০৪), "এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব" (১৯৭২) এবং "হোমারের ওডেসি" (১৯৯০)। তিনি লেখক সংঘ পুরস্কার (১৯৭৫), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৬), একুশে পদক (১৯৯৬) সহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।