

নিদাস্তিয়া
একটি শিশু পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হবার পর তার বাবা মার ছায়াতলে বড় হয়। সেখানে সে আশ্রয় পায়, পরিচয় পায়। আস্তে আস্তে সে জীবনবোধ, ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করে মানুষ হয়। কিন্তু কত ভাগ সফল কিংবা অসফল সেটা পুরোপুরিই তার পরিচয়ের উপরে নয়, কিছুটা হলেও নিজের উপর নির্ভরশীল। ফাদার বারুশ সবসময় নিদাস্তিয়া আত্মপরিচয়েই বড় হোক, সেই কামনাই করত। নিখিল দম নিদাস্তিয়া, এই কাহিনীর নায়ক, কিংবা খলনায়ক। খলনায়ক কেন বললাম সেটা জানতে পুরো কাহীনি পড়া আবশ্যক। বংশপরিচয়হীন এই নিদাস্তিয়া বড় হয়েছে গীর্জায়। নয় বছর পর্যন্ত ফাদার বারুশ তাকে ছত্রছায়ায় রাখলেও পরবর্তীতে তার দেখভালের দায়িত্ব অর্পন করে যান তার শিষ্য জোসেফ জসোয়ায়ের উপর। বারুশ কখনো চাননি নিদাস্তিয়া জীবনবোধ কিংবা মানবতার নৈতিক রেখাগুলো চিনে ফেলার আগে ধর্মের কাঠগড়ায় দাঁড়াক। তাই সবার আগে সে একজন মানুষ নিদাস্তিয়াকে গড়ে তার উপরেই নিজের ধর্ম চয়নের ভার সপে দেন। অথচ এই ধর্মযাজক বারুশই আজ কোথায় আছে নিদাস্তিয়ার জানা নেই। নিদাস্তিয়া কক্সবাজার এসেছে একটা কাজে, কাজটা মূলত নাফ নদী পার হওয়া মিয়ানমারের শরণার্থীদের কেন্দ্র করেই। তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নব্বইজন কর্মীদের মধ্যে সে একজন। এখানে তার একজনের সঙ্গেই বেশ জমে, নানাগাজী। মধ্যকার এই বোঝাপড়ায় তাদের দুজনের বয়সের দেয়াল যেন ঘুচিয়ে দিয়েছে। পরস্পরের পরম সান্নিধ্যে মুহূর্তেই নানাগাজীর কবিসত্তা যেমন জেগে উঠে, তেমনি নিদাস্তিয়া হয়ে যায় এক মনযোগী শ্রোতা। এখানে কাজকর্ম ভালোই চলে যেত হয়তো, কিন্তু আজকাল এই নিঃসঙ্গ ছেলেটার মধ্যে বিক্ষিপ্ততা আরো বাড়ছে যেন! কেন যেন আজকাল নিজের সম্বন্ধে জানতে অপার আগ্রহ হয়! গল্পটা নিদাস্তিয়ার হলেও শুরুটা হয়েছিল আলী কদম ভবনে বসবাসরত এক সম্ভ্রান্ত নারী রাশা বাশরীর খুন দিয়ে। একজন অবিবাহিত, নির্ঝঞ্ঝাট নারীর খুনের হেতু কিংবা যথাযথ প্রমাণ সবটাই জোগাড় করতে যখন পুলিশ ব্যার্থ তখন আশার আলো হয়ে পিদিমে আলো দেয় আলী কদম ভবনের নিরাপত্তা কর্মী দানু মিয়ার বর্ণিত খুনির স্কেচ! দানু মিয়ার মুখ খুলতে পুলিশ অফিসার শংকর মিত্র এবং আসাদুল করিম কম কাঠখড় পোড়ায়নি! কিন্তু স্কেচটা কার? পেশায় একজন ফ্যাশন ডিজাইনার, পরিবার পরিজন ছাড়া এক নারীকে কে হত্যা করল? এসবের কি কোন যোগসূত্র আছে নিদাস্তিয়ার সঙ্গে? নিদাস্তিয়া মূলত একটি ত্রয়ী উপন্যাসের প্রথম পর্ব। লেখক অবিরাম চেষ্টা করে গেছে পাঠকমনে একটা আগ্রহ রেখে যেতে যার ছায়া ধরে আসন্ন পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকা যায়। কাহীনি একটা খুনের সূত্র ধরে শুরু হয়ে মন্থরগতিতে এগিয়ে গেছে নিদাস্তিয়া নামের চরিত্রটিকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য। এখানে কিছুটা চমকপ্রদ ঘটনা হলো কাহীনি বেশ জটিল না হলেও অনুমান করা কিঞ্চিত কঠিন। এমনটা বলার কারণ হলো, কখনো পাঠকের নিদাস্তিয়ার নিয়তি নিয়ে কঠোর অভিযোগ থাকতে পারে, আবার কখনো তাকে দ্বৈত সত্তার মানুষ বলে মনে হতে পারে। এমন একটা মোড়ে গিয়ে কাহিনী থেমেছে যেখানে শেষের দুপাতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে থেকে আবার পাঠক জল্পনা কল্পনা করে মোটামুটি একটা ধারণা করে রাখতে পারবে দ্বিতীয় খন্ডের জন্য। এবং সেই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে যেন নিদাস্তিয়ার পরিণতিটা একটু উল্টে যায় এবং এতে আলোকপাত হয়। বইটিতে বেশ কিছু কবিতা আছে, যেগুলো গতানুগতিক ভাবাবেগ থেকে বেরিয়ে একটু জীবনবোধের রাজ্য থেকে ঘুরিয়ে আনবে। সর্বোপরি হ্যাপি রিডিং। বইয়ের নাম: নিদাস্তিয়া লেখক: তকিব তৌফিক প্রকাশনা: নালন্দা প্রচ্ছদ: ফুয়াদ শেখ পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১০৪ মুদ্রিত মূল্য: ২২৫ টাকা
নিদাস্তিয়া। নিখিল দম নিদাস্তিয়া। আমার আজকের আলোচ্য উপন্যাসের নায়ক। ঠিক নায়ক না, সাহিত্যালোচনায় ইংরেজিতে বলতে পারি Protagonist। সে-ই কি হিরো?নাকি ভিলেন? এমন কিছু প্রশ্ন মনে জাগবে পড়ার সময়। চরিত্র নিদাস্তিয়ার আলোচনায় আসার আগে কিছু ব্যক্তিগত কথা সেরে নিই। নিদাস্তিয়াকে যিনি প্রাণ দিয়েছেন, তিনি তরুণ লেখক তকিব তৌফিক। 'এপিলেপটিক হায়দার', 'কাঙালের সংলাপ', 'অধ্যায়' এর পর তাঁর চতুর্থ ব্রেইন চাইল্ড 'নিদাস্তিয়া'। জনরা হিসেবে এটি থ্রিলার। নগরীতে খুন হয়ে যাওয়া রাশা বাশরী, অফিসার ইনচার্জ আসাদুল করিম, অফিসার শঙ্কর মিত্র, দানু মিয়ার মত চরিত্রগুলোর অবতারণায় সামগ্রিকভাবে মনে হতে পারে -- এটি একটি এ্যাকশন থ্রিলার অথবা ডার্ক থ্রিলার অথবা ডিটেকটিভ উপন্যাস। আবার কখনো মনে হতে পারে এটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, এটি পাঠকের মর্জির উপর নির্ভর করবে। ব্যক্তিগত যে কথাগুলো বলতে চাইছিলাম, সেগুলি বলি। বইটির প্রচারণা, রিভিউ দেখেই আকৃষ্ট হয়েছিলাম কিনতে, যেহেতু প্রেমজ্বরে ভোগা নব্য হুমায়ূন যুগে এটি কিছুটা হলেও ভিন্ন আঙ্গিকের স্বাদ দিতে পারে। কিন্তু তরুণ প্র্যাকটিসিং রাইটার তকিব তৌফিক কতটা পারদর্শী হবেন, এটা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিল। কিন্তু একটা কথা আমার মনে হয়, আমরা যখন কোনো নতুন লেখকের লেখা পড়বো, কোনো রকম প্যারামিটার/স্ট্যান্ডার্ড মাথার মধ্যে না রেখেই পড়বো। কারণ রবীন্দ্রনাথ/শরৎচন্দ্রকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরে যদি বাকী সবার লেখনীকে যাচাই করতে চাই, তবে সবাই শূন্যের নিচে নেমে যাবে। কবি কিংবা লেখক প্রত্যেকেই তাঁর নিজ জায়গাতে স্বতন্ত্র; কেউ কারো মত হতে পারে না। তো কেনার আগে মনে মনে যেটা ভেবেছিলাম, যদি লেখা একটুও জাতের না হয়, ট্র্যাশে ফেলে দিবো একদম। কিন্তু কেনার পর ভিন্ন রকম ঘটনা ঘটলো। কবি W. B. Yeats , রবীন্দ্রনাথের Song Offerings এর পাণ্ডুলিপি যেমন ট্রেনে- বাসে এখানে সেখানে কাজের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে, আমারো তেমনি অবস্থা হলো। কলিগরা "কী পড়ছেন?" জিজ্ঞেস করলে আমি ওড়না দিয়ে মলাটটা ঢেকে বলি "ঐ, কিছু না"। ব্যাপারটা এমন হলো, যে ছুরিখানা আস্তিনের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম শত্রুকে আঘাতের জন্য, সেটার আঘাতে নিজেই রক্তাক্ত হলাম, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়। এবার আসি 'নিদাস্তিয়া'র থিম এবং স্ট্রাকচারে। থিমের জায়গাতেই 'নিদাস্তিয়া' অনন্য। প্রথমেই রয়েছে, একটি রহস্য। সেটি উন্মোচিত হয়েছে কী হয় নি, কীভাবে হয়েছে, কতটুকু হয়েছে, এর সিক্যুয়াল থাকবে কী -- এই জিজ্ঞাসাগুলো গোপনীয় রাখলাম পাঠকদের জন্য। কিন্তু সব রহস্যকে ছাড়িয়ে কিছু মৌলিক ভাবনায় আঘাত হেনেছেন লেখক তৌফিক। প্রথমত, অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব সংকট (Identity and identity crisis)। এলহাম এদানূর যখন জিজ্ঞেস করে "বলো তোমার কী পরিচয়?", নিদাস্তিয়ার উত্তর: 'আমি! আমি নিদাস্তিয়া।' এদানূরের প্রত্যুত্তরে আমরা চমকে উঠি -- "এটুকুই কি তোমার পরিচয়? একটা নামই কি তোমার বিশদ ব্যাখ্যা?" সত্যিই, নাম, কেবলমাত্র নাম-ই কি একজন মানুষের পরিচয়? রহিম যার নাম, তার নামটি করিম হতে পারতো, যাদব বা মাধবও হতে পারতো। তাতে বিশেষ কী পার্থক্য ছিল? তদুপরি, নিদাস্তিয়া পিতৃমাতৃহীন এতিম যুবক। গীর্জায় সে বেড়ে উঠেছে। "গীর্জার প্রধান ধর্মযাজকের আশ্রয়ে বড় হওয়া ছেলেটির আলাদা করে কী আর পরিচয় হতে পারে? একজন ধর্মযাজকই তার পিতা, গীর্জার আশ্রয়কেন্দ্র তার ঘর, তার বাড়ি। এর বেশি আর কোনো পরিচয় নেই নিদাস্তিয়ার।" বারংবার অস্তিত্ব এবং অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়া ছেলেটি তাই নিজেকে খুঁজে বেড়ায়, আয়নার সামনে দাঁড়ায়, মুখোমুখি হয় তার অবচেতন এর আর সেই অবচেতন তাকে তাড়া করতে থাকে প্রতিনিয়তই। Self এর ধারণা যখন shattered, ভাঙাচোরা আয়নার টুকরোগুলো মিলিয়ে যেন একটি জোরপূর্বক জোড়া লাগানোর চেষ্টা, নিজেকে খোঁজার চেষ্টা, কখনো হ্যালুসিনেশনে, কখনো কবিতায়, কখনো ফাদার বারুশের স্মৃতিতে। একই অস্তিত্ব সংকটে প্যারালালি আমরা ভুগতে দেখি নানাগাজীর বেড়াল যুবালকে, শরণার্থী রাবেয়া বুলুকে। বলা চলে, যুবাল এবং রায়েয়া বুলুর অংশগুলো আপাতত উপন্যাসের মনোমুগ্ধকর সাবপ্লট। অস্তিত্বের প্রশ্নের সাথে জড়িয়ে আছে একটি ফাদার ফিগার -- একজন অভিভাবকের, একটি ছত্রছায়ার জন্য আজন্ম প্রার্থনা। ফ্রয়েডিয়ান বা লাকানিয়ান এ্যানালিসিসে ফাদার বারুশ তাই নিদাস্তিয়ার সেই ফাদার ফিগার, যাঁকে সে তাঁর জীবনের আইডল বলে মানে, এরপর ঘটনার পরিক্রমায় আসেন নানাগাজী। বলা চলে, নানাগাজী, ফাদার বারুশের রিপ্লেসমেন্ট। রাবেয়া বুলুর জীবনেও চাচা আলী আজম সেই ফাদার ফিগার। একটি মজার ব্যাপার, এই উপন্যাসে নারী চরিত্রের উপস্থিতি যৎসামান্য। এবং চরিত্রগুলো অদ্ভুতভাবে নারীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এবং সংকটময় মুহুর্তগুলোতে পুরুষ , পুরুষের বন্ধু হয়েছে, তৈরি হয়েছে ভাতৃ্ত্বের বন্ধন, পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেটা লেখক তকিব তৌফিক ভাবিয়ে তুলেছেন -- সেটি ধর্ম সম্পর্কে। একজন মানুষ মুসলিম অথবা খ্রিস্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে বলেই কি সে মুসলিম অথবা খ্রিস্টান? তার কি একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর নিজ পছন্দ মত ধর্ম বাছাইয়ের স্বাধীনতা থাকতে পারে না? অথবা, ক্রিশ্চিয়ান চার্চগুলো এই যে অবাধে শতাব্দীর পর শতাব্দী অনাথ শিশুদের ব্যাপটাইজ করে চলে এসেছে, তার নৈতিক যৌক্তিকতা কতখানি? কিংবা একজন ধর্মযাজকের কোনটিতে বেশি প্রাধান্য দেয়া উচিত -- ধর্মীয় শিক্ষা নাকি নৈতিক শিক্ষা? এ দুইয়ের দোলাচলে দোদুল্যমান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফাদার বারুশের মত রেডিক্যাল চিন্তাদর্শের মানুষটির ঠাঁই হবে কি? The answer is my friend, is blowing in the wind, sorry, in the novel, too. থিমের পর আসি স্ট্রাকচারে । কতগুলো ছোটো ছোটো অধ্যায়ে পুরো উপন্যাসটি সাজানো। কিছুটা নাটকের এ্যাক্ট,সিনে বিভক্ত করার মতোই। ঘটনার ঘনঘটায় খুব বেশি গুলিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর চরিত্রগুলোর খুঁটিনাটি বর্ণনা বেশ মনে ধরার মত। একটা গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের অবতারণার মাঝে যে সময়টুকু পাঠকের মস্তিষ্ককে তুলনামূলক সফট ম্যাটেরিয়াল এর বর্ণনা দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হয়, লেখক সেই কাজটি মনযোগ দিয়ে করার চেষ্টা করেছেন। সময়ের ব্যাপারটিও মাথায় রেখেছেন সূক্ষ্মভাবে। একটি দৃশ্য শুরু করে অপটুভাবে সেটি শেষ না করে পরের অধ্যায়ে যান নি। টাইম এ্যান্ড স্পেস -- উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ দুটো দিক। উপন্যাসটি মূলত একটি সম্মুখ সময়ে ঘটলেও হঠাৎ হঠাৎ কিছু ঘটনা অতীতে চলে যায়, এবং বেশির ভাগই চরিত্রগুলোর ভাবনাতে। অতীত এবং বর্তমানের এই ব্লেন্ডিংটাও পাঠকের ভালো লাগার মত একটি উপাদান (Stream of Consciousness) এবং চরিত্রগুলোর হাত ধরে অতীতে ঘুরে আসার এই অভিজ্ঞতাগুলোও চমৎকার হবে আশা করি। ঘটনার স্থানগুলো চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রিকই , সেই হিসেবে শরণার্থী শিবির উখিয়া , জামালখান -- নামগুলো পাঠককে আলাদারকম সাসপেন্স দিতেই পারে। সর্বোপরি, আরেকটি যে জিনিসটা উপন্যাস হিসেবে "নিদাস্তিয়া"কে অনন্যসাধারণ করে তোলে, তা হচ্ছে, এর দর্শন। একটি চিরন্তন, শ্বাশত জীবনবোধ যেন মাখামাখি পৃষ্ঠাগুলোতে। সামান্য পিঁপড়ের সারি, বেড়ালের আদুরমুখো স্বভাব, সিগারেটের ধোঁয়া -- এই ছোট্ট ছোট্ট সিম্বলিজম অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে বাধ্য। 'নিদাস্তিয়া' উপন্যাসটির আকর্ষণীয় দিকটি এর প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ শিল্পী ফুয়াদ শেখ তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন কালার কম্বিনেশনে -- ব্ল্যাক, নেভি ব্লু, এ্যাশ এবং হোয়াইট। তার মাঝে কিছুটা লাল। ঐ লালটুকু বুঝিয়ে দেয় অনাচার অথবা বিপ্লব, রাশা বাশরীর খুন এবং নিদাস্তিয়ার আসন্ন বিপর্যয়। সাদা আর কালোর মুখোমুখি দুই অবয়ব যেন ঠিক আয়নার এপাশে ওপাশে -- একটি মানুষ যেন নিজের মুখোমুখি, আত্ম-আবিষ্কারে, আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন। কালো অবয়বটি মেঘের সাথে মিলে গেছে, আর সাদাটি বরফচূড়ায়। আমাদের id (কালো), ego (নীল) আর super-ego (সাদা) -- এই তিন অংশই যেন প্রচ্ছদের সবটা জুড়ে আছে। আপাতত আমার কাছে এটাই ব্যাখ্যা। আর প্রকাশনী হিসেবে নালন্দার উপস্থাপন বরাবরই নান্দনিক, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু শেষ পৃষ্ঠাতে লাইন স্পেসিং আর সব পৃষ্ঠার সাথে মেলে নি, এটা প্রকাশক পুনরায় ভেবে দেখতে পারেন। সীমাবদ্ধতার মধ্যে কিছু স্পেলিং এবং টাইপিং মিস্টেক আছে, আশা করা যায় পরবর্তী মুদ্রণে লেখক সেগুলোকে সংশোধন করবেন। আর লেখনীর ভাষাটা কোথাও কোথাও , বিশেষত শেষ দিকে মনে হতে পারে , অনুবাদের ভাষার মত। হয়তো তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমন হয়েছে। তবে তরুণ লেখক হিসেবে তকিব তৌফিক যে প্রচেষ্টা করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য, কারণ এতো এতো প্রেম আর রোম্যান্টিক উপন্যাসের ভীড়ে কেউ একজন শিকল ভাঙ্গার গান শোনালেন, নিভৃতে রক্তে মিশিয়ে দিলেন জাগরণের মণ্ত্র। এই তো প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ! পরিশেষে, ফাদার বারুশের চিঠির একাংশ দিয়ে শেষ করছি। নতুন - পুরাতন, অতীত - বর্তমানের যে চিরন্তন সংঘর্ষ তার কিছুটা সমাধান মেলে এই চিঠিতে। প্রিয় নিদা, ......... ......... তুমি নিদাস্তিয়া, নিখিল দম নিদাস্তিয়া। তোমার শৈশব কেটেছে গির্জায়, তোমার যে কৈশোর কেটেছে তাও গির্জার ছায়ায়। এই সময়গুলোও ভুলে যেও না। তুমি জেনে নাও এসবই তোমার পরিচয়, তোমার অস্তিত্ব। তুমি তার বেশি অতীতে পৌঁছাতে যেও না। তুমি ভবিষ্যত নিয়ে উত্তেজিত থাকো। সেটাকে উজ্জ্বল আলোয় বরণ করে নাও। এর বেশি তুমি জানতে চেয়ো না। তুমি এই বারুশকে ভরসা করে কদম ফেলে আজ এতটা হেমন্ত দেখেছো, দেখেছো শরতের বিকেল, বুঝতে শিখেছো বসন্তের মর্ম। তুমি স্মৃতিতে তা-ই স্মারকলিপি গড়ে রাখো যা তুমি দেখে দেখে বেড়ে উঠেছো। যা তোমার শৈশব আর কৈশোরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তুমি নিজেই তোমার পরিচয় হও। এর বেশি কিছু জানতে চেয়ো না। ভালো থাকো। ইতি বারুশ
SIMILAR BOOKS
