সুকুমার রায় (৩০ অক্টোবর, ১৮৮৭ - ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩) একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স রাইমের" প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তাঁর মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিত এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিত রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (জন্ম : ৭ মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (মৃত্যু : ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)। তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছােটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমােট ৯৫টি ছােটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খন্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পান।
মাহমুদউল্লাহ
আলাউদ্দিন আল আজাদ
আলাউদ্দিন আল আজাদ নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার অন্তর্গত রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারিখ ৬ মে ১৯৩২। পিতা গাজী আবদুস সােবহান, মাতা আমেনা খাতুন। প্রপিতামহ মাদারি প্রধান প্রাজ্ঞব্যক্তি হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন এবং মাতামহ শাহ আমানত আলি একজন লােককবি । পৌরাণিক ও কিংবদন্তীর নদ ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী এই ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় পল্লী প্রাচীন সুবর্ণবীথি, আজকের সােনারগাঁও ভূখণ্ড যা একদা মসলিনের জন্য বিশ্ববিখ্যাত ছিল, তার পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। | চার কন্যার পর বহু আকাঙ্খর ধন পুত্র, শিশুটির ডাকনাম রাখা হয় বাদশাহ। কিন্তু সম্রাট অচিরেই নিঃস্ব হয়ে যান যখন তার দেড় বছর বয়সে জননী মৃত্যুবরণ করেন; এবং দশ বছর বয়সে জনক। গ্রামীণ আত্মীস্বজনেরা জমিজমা দখল করেন। এ দিকে পঞ্চাশের মন্বন্তর। নবীন কিশাের আজাদের মাথায় যেন অলৌকিকভাবেই একটি শিখা জ্বলে উঠল, তিনি উপলব্ধি করলেন, এখন শিক্ষাই তার একমাত্র অস্ত্র। বইয়ের মধ্যে এক রােমাঞ্চকর জগত আবিষ্কার করলেন। মেধা বিকশিত হতে থাকে, স্বপ্নের মত। তিনি প্রত্যেক শ্রেণীতে প্রথম হতে লাগলেন। নারায়ণপুর উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। বুঝলেন, গাঁয়ে লেখাপড়া হবে না। একটা ছােট টিনের সুটকেস হাতে নিয়ে পাড়ি জমালেন ঢাকায়। পৌছবার পরদিনই ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হয়ে গেলেন। প্রথম বিভাগ হওয়ায় ফ্রি স্টুডেন্টশিপ পেলেন এবং ষােল টাকা মহসিন বৃত্তি । রাতের বেলায় খবরের কাগজে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। তার পালয়িত্রী দাদিমা বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ডাক্তারি পড়বেন; কিন্তু যে জীবন, খরচ এবং সময় কোনটাই দেয়া সম্ভব ছিল না। বাংলা অনার্স পরীক্ষায় দীর্ঘ বারাে বছর পর তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন; এবং মাস্টার্সেও বিভাগীয় ছাত্রদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। পরে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষা মারফত বৈদেশিক বৃত্তি অর্জন করলেন এবং উচ্চশিক্ষা লাভার্থে ইংল্যান্ড যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর অব ফিলিসফি (ph.D) ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৭০)। এ সময় রয়াল সােসাইটিরও ফেলাে নির্বাচিত হন। (F.R.A.S)। পরে আমেরিকান আধুনিক ভাষা সমিতির সদস্য হয়েছেন (M.M.L.A)। অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যে উচ্চ প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন (১৯৮৩)। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক।