মৃত্যুর মাঝে জীবন খুঁজে ফেরা তরুণ বিজ্ঞানী আবরার সৈকত গভীর রাতে তুষারঝরা এক শহরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। পাহাড়ঘেরা নিসঃঙ্গ এক প্রকৃতির দিকে অনিমেষ তাকিয়ে সে উপলব্ধি করে ‘বিজ্ঞান’ আর ‘সভ্যতা' এই মহাকালের কাছে কত অসহায়! তখনই তার সহকর্মী সিলভিয়ার একই উপলব্ধি নিয়ে সে যখন স্মৃতিকাতর ঠিক তখন অবাক হয়ে সে দেখে ভালােবাসার কোনাে ইঙ্গিতেই কোনােদিন সাড়া না দেওয়া সিলভিয়া এই মধ্যরাতে কখন তার ঘরে এসে সন্তর্পণে বসে আছে। কিন্তু বিজ্ঞান-সংস্কারকে ধ্যান-জ্ঞান করে রােমাঞ্চকর জীবনকে চিরতরে বিদায় জানানাে সেই সিলভিয়া আজ কিনা শরীরে এক টুকরা কাপড়ও রাখে নি। বিস্মিত সৈকত এই জীবন নিয়ে মুগ্ধ করতেই সিলভিয়াকে তার দেখা এক স্বপ্নের অনুভূতির বর্ণনা দেয়। মাঝে মাঝেই যে স্বপ্নটা তাকে অস্থির করে তা হলাে, তাদের গবেষণার বিষয়-ব্রেইন, হাট এবং ফুসফুসের অপর্যাপ্ত ক্রিয়ায় দেহের মৃত্যু হলেও এই অঙ্গগুলাের ব্যবহারােপযােগী কোষগুলােকে পুনরায় মানবদেহে পুনসংযােগ করা যায় তার প্রাপ্ত ফলাফল স্বপ্নে চুরি করতে আসা একজনকে বাধা দিলে সৈকতকে সেই চোর চাকু দিয়ে খুন করে। সে খুন হওয়া এবং মৃত্যুপারে মানুষের ফিরে যাওয়ার স্বপ্ননুভূতিরই বর্ণনা দেয় সিলভিয়ার কাছে। স্বপ্নের বর্ণনা শেষ হতে না হতেই বিজ্ঞানী আলবার্ট অনবরত তার দরজায় কড়া নাড়ে। সৈকত দরজা খুলে দিলে ভূতগ্রস্তের মতাে আলবার্ট দ্রুত গবেষণাগারে ফিরে যাবার অনুরােধ করে তাকে জানায় ভয়ঙ্কর আর রহস্যময় এক ঘটনা। নিঃসঙ্গতার নগ্ন খােলস গল্পটার শেষাংশ পড়ামাত্র পাঠক মহাকালের কাছে দাড়িয়ে অনুভব করেন তিনি নিজেও নিসঃঙ্গতার এক নগ্ন খােলসের মাঝে আটকা পড়ে আছেন। জীবনের কুহেলিকাময় বিস্তৃত মায়ার কাছে তিনি বড় একা! ‘নিঃসঙ্গতার নগ্ন খােলস’ গল্পগ্রন্থের প্রতিটি গল্প আলাদা আলাদা আমেজে সৃষ্টি। এই গল্পগ্রন্থের একটি গল্প অন্য আরেকটি গল্পের চেয়ে একেবারে আলাদা হয়েও একখানে এর সূত্র গাঁথা। আর তা হলাে কাজী রাফির নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র ভাষায় চারণ কবির মতাে গেয়ে চলা জীবনের গভীর এক একটি বােধ।
কাজী রাফি
কথাসাহিত্যিক কাজী রাফি ১৯৭৫ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইচ উদ্দীন এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশনসহ কমিশনপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে তিনি নিজ ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস তার লেখা প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা ত্রিমোহিনী রূপডাঙ্গার সন্ধানে পাসওয়ার্ড রংধনুর সাঁকো লে জোঁ নদীর বাঁকে নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস অরোরার আঙুল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । প্রথম উপন্যাস ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০ এবং এম এস ক্রিয়েশন (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) সম্মাননা’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ ।