ঢাকায় এসে আমি একেবারে বেকুব হয়ে গেলাম। কোথাও মিলিটারির কোনাে চিহ্ন নেই, দোকানপাট খােলা, গাড়ি চলছে। বাস চলছে, রাস্তাঘাটে মানুষজনের ভিড়। ছােট ছােট বাচ্চারা গল্প করতে করতে স্কুলে যাচ্ছে, দেখে কে বলবে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে। অথচ ঢাকার বাইরে কী অবস্থা! ট্রেনে এসেছি আজ, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা আসতে লেগেছে এগার ঘণ্টা, গৌরীপুরে চার ঘণ্টা ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখল। শুধু কি তাই? মাঝখানে হঠাৎ এক জায়গায় থামিয়ে দুইজন মিলিটারি চারজন মানুষকে টেনে বাঁশঝাড়ের পিছনে নিয়ে গেল। গুলির শব্দ হলাে কয়েকটা-তারপর মিলিটারিগুলাে সিগারেট টানতে টানতে ফিরে এলাে। সত্যি কথা বলতে কী সবার সামনে গুলি করে বসে নি বলে আমার মিলিটারিগুলাের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা বােধের জন্ম হয়ে গেল। ভয় যে হচ্ছিল না তা নয়। বেশি ভয়ে পেলে আমার আবার বাথরুম চেপে যায়, ট্রেনের বাথরুমের যা অবস্থা যাওয়ার উপায় নেই, চেপে বসে রইলাম। মনে হতে লাগল কেন খামাখা বের হতে গেলাম, বাড়িতে থাকাই তাে ভালাে ছিল।
কিন্তু বাড়িতে থাকি কেমন করে? প্রথম প্রথম এক দুইদিন একটু পিকনিক পিকনিক মনে হয়। তারপর মহাযন্ত্রণা। ভালাে সিগারেট নেই। চা পাওয়া যায় না, যদি বা চা যােগাড় করা যায় খেতে হয় গুড় দিয়ে। টানা পায়খানায় পুকুর থেকে পিতলের বদনা ভরে নিয়ে যেতে হয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।