লেখক পরিচিতি কবি, সাহিত্যিক, বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ জীবনের মতো, সময়ের মতো অতল এক পরিবর্তনের স্রোত খালেদ হোসাইনের কবিতার অন্তস্তলে প্রবহমান। অখণ্ড বিশ্বের নিজেকে স্থাপন করে বুঝে নেবার চেষ্টা রয়েছে কবিতায়। সমস্ত কবিতাই যেন ব্যক্তিগত উৎসার, ব্যক্তিগত পবিত্রতার অকৃত্রিম প্রবাহ।
খালেদ হোসাইনের কবিতা তাঁর কবি-জীবনেরই প্রশ্বাস। যুগপৎ সৌন্দর্য-নির্মাণ, দর্শন ও রূপকল্পের সন্ধান তাঁর কবিতায় আমরা লক্ষ করি। একটি সরল অবারিত অশেষ জীবন রহস্যাচ্ছন্ন হয়ে কবিতার চিরকালীনতায় উদ্ভাসিত হয়েছে। স্মৃতি-স্বপ্ন-কল্পনা-ভালোবাসা প্রেম-অপ্রেম ও হাহাকারে এক নতুনতর ব্যঞ্জনার প্রতিভাস এই কবিতা। তাঁর বেদনা গভীর, পরিব্যাপ্ত অথচ নির্ভার। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ ও চিত্রকল্পের চকিত উদ্ভাস দুরূহ নয়, তবে তা অপার রহস্যময়। জীবন তেকে আরোতর জীবনে, জীবন থেকে স্বপ্ন -কল্পনা-স্মৃতিতে দ্রুত যাতাযাতে তার মনোভঙ্গি ও স্বরভঙ্গির পরিবর্তন পাঠককে আপ্লুত করবে সন্দেহ নেই।
জীবন-মৃত্যুকে ছাড়িয়ে বিস্তৃত তাঁর কল্পনার সীমা; তা অন্যতর পৃথিবীতেও বিস্তৃত হবার আকাঙ্ক্ষায় আকুল। জানতে পারি, অন্তত আরেকটা জীবন দরকার-কবিতাকে যাপন করবার জন্যে, জীবনকে যাপন করবার জন্যে। কবিতায় প্রকাশিত ভালোবাসা-হাহাকার, অপ্রেম স্মৃতি ও স্বপ্নের মগ্নতায় একাকার হলে কখনো-বা আমাদের যৌথ-জীবনকেও খুঁজে পাই তাতে।
খালেদ হোসাইন
খালেদ হােসাইন। জন্ম: ১৯৬৪। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। মা: সুফিয়া খাতুন। বাবা: গােলজার
হােসাইন।
ছেলেবেলায় বড়বােনের হাত ধরে বেড়াতে যেতেন। পরীদের বাড়ি। আকাশে পুঞ্জীভূত মেঘের সাদায় রবীন্দ্রনাথকে দেখে বিহ্বল হয়ে পড়তেন, কৈশােরেই। বুকে বেদনার বীজ বুনে দিয়েছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মা কবিতা লিখতেন, আর স্বপ্ন দেখতেন। একটা স্বপ্ন ছিল, এই ছেলে কবি হবে। খালেদ হেসাইনের কবিতার জগতটি ক্রমাগত রহস্যময় হয়ে উঠছে। তিন দশক পরিব্যাপ্ত কাব্যসাধনার ফসল। ইলা মিত্র ও অন্যান্য কবিতা' (২০০০), ‘শিকারযাত্রার আয়ােজন' (২০০৫) ও জলছবির ক্যানভাস (২০০৬)। পাতাদের সংসার (২০০৭), এক দুপুরের। ঢেউ (২০০৮)। সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে বৈচিত্রভাস্বর। ব্যক্তিগত রােমান্টিকতা প্রসারিত হয়ে স্বদেশ-স্বকাল ছাপিয়ে সর্বজনীন ও সার্বভৌম হয়ে উঠছে। কবিতার অন্তর্গত শিরা-উপশিরার রক্তবদলই কেবল নয়, প্রাকরণিক নানা নিরীক্ষায়ও তিনি কবিতাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছেন। খালেদ হােসাইনের কবিতাকে চেনা যায়। লেখকের ধাতটা আলাদা, কবিতার জাতটাও আলাদা। ভালােবেসে বিয়ে করেছেন আইরীন পারভীনকে, যিনি একটি কলেজে শিক্ষক। মেয়ের নাম রােদেলা। সুকৃতি, ছেলে অভীতি রৌদ্র। খালেদ হােসাইনের নেশা ভ্রমণ, স্বভাবে ঘরকুনে। পেশায় তিনি বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।