ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ হরিশংকর জলদাস তাঁর আগের তিনটি উপন্যাসে জেলেদের সমাজজীবন আর পতিতাদের ক্লেদময় জীবনের কাহিনি শুনিয়েছেন। রামগোলাম হরিজনদের জীবনভাষ্য। ব্রহ্মা নাকি শুধু বিষ্ঠা সাফ করানোর জন্য নিজের শরীরের ময়লা থেকে মহীথর সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সৃষ্টিকাল থেকে আজ পর্যন্ত তারা অচ্ছুৎ। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কানপুর, এলাহাবাদ প্রভৃতি জায়গা থেকে এই সম্প্রদায়কে মোগল নবাব আর ইংরেজরা এ দেশে এনেছিল। নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তাদের। কিন্তু এখন তাদের কোণঠাসা অবস্থা। পর্যাপ্ত থাকার ঘর নেই, পানি নেই; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের ঘর, বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে চাকরি থেকে; তাদের প্রথা-সংস্কার-ধর্মবিশ্বাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। প্রকাশ্যে তাদের স্পর্শ করতে বাধে, কিন্তু গোপনে ভোগ করতে দ্বিধা নেই। মেথরদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় মিশে দলিত, অধিকারবঞ্চিত এই সম্প্রদায়কে নিয়ে হরিশংকর এমন একটি উপন্যাস লিখেছেন, যেখানে মহাভারত, মনুসংহিতা, পুরাণকথা আর বর্তমানের মেথরজীবন একাকার হয়ে উঠেছে। বঞ্চনা, প্রেম, যৌনতা-মেথরসমাজের আদ্যোপান্ত ইতিহাস যেন রামগোলাম।
হরিশংকর জলদাস
১৯৫৫'র ১২ অক্টোবর জন্ম, চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গার জেলেপল্লিতে। সাতচল্লিশ বছর বয়সে লিখতে বসা ঠেকায় পড়ে। লিখতে বসেছিলেন গবেষণাপত্র, লিখে ফেললেন ‘জলপুত্র’ উপন্যাসটি। জলপুত্র’ হরিশংকর জলদাসকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিল। নতুনধারার নতুন রকম উপন্যাস পরের বছরে বের হলো 'দহনকাল’, ‘কসবি’, ‘রামগােলাম’, ‘হৃদয়নদী, ‘মােহনা’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘আমি মৃণালিনী নই’, ‘এখন তুমি কেমন আছ', ‘একলব্য' উপন্যাসগুলাে। তার গল্পের বই-জলদাসীর গল্প’, ‘লুচ্চা’, ‘হরকিশােরবাবু “কোনাে এক চন্দ্রাবতী’, ‘মাকাললতা', 'বাছাই বারাে' ও ‘গল্পসমগ্র : ১' বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়েছে। তাঁর ডক্টরাল থিসিস ‘নদীভিত্তিক বাংলা উপন্যাস ও কৈবর্তজনজীবন অন্যান্য গদ্যগ্রন্থ-কৈবর্ত কথা’, ‘নিজের সঙ্গে দেখা’, ‘জীবনানন্দ ও তাঁর কাল’, ‘লােকবাদক বিনয়বাশী’, ‘বাংলা সাহিত্যের নানা অনুষঙ্গ। হরিশংকর জলদাস কাহিনী লিখেন না শুধু, সমাজকেও লিখেন। কথাসাহিত্যে ব্যতিক্রমী হাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। তার চরিত্ররা সমাজের প্রান্তজন- জেলে, বীরাঙ্গনা, মেথর, কোটনা, মুচি, খুনি সাহিত্যকর্মের জন্য পেয়েছেন ‘আলাওল সাহিত্য পুরস্কার' (জলপুত্র), ‘প্রথম আলাে বর্ষসেরা, বই পুরস্কার’ (দহনকাল), সিটি আনন্দ আলাে পুরস্কার’ ও ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্মাননা পদক' (রামগােলাম), ব্র্যাকব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কার (প্রতিদ্বন্দ্বী)। কথাসাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন অবসর সাহিত্য পুরস্কার’, ‘ড. রশিদ আল ফারুকী সাহিত্য পুরস্কার।
কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার। পেয়েছেন ২০১২ সালে।
Title :
রামগোলাম (সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত)