ব্রহ্মপুত্র নদের সাত পাঁকের বন্ধনে আবদ্ধ নদী শীতলক্ষ্যা। প্রবহমান সেই আদিকাল থেকে। দুই পাড়ের মানুষ, জীববৈচিত্র্য আর উদ্ভিদ প্রজাতির জন্য মাতৃদুগ্ধসম সুধা অকাতরে দান করে ধন্য হয়েছে। দুই পাড়ে মানুষের যে বিচিত্র রকমের সভ্যতা গড়ে উঠেছে যুগে যুগে, সে তো লক্ষ্যারই দান। মিশর যেমন নীল নদের, বৃহত্তর ময়মনসিংহের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বর্তমান গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ তেমনি শীতলক্ষ্যার দান। শীতলক্ষ্যা এক নারী। রমণী হৃদয়। মমতাময়ী মা। এই কাহিনীর প্রধান চরিত্র। দুই পাড়ের মানুষ আর প্রকৃতির মিথস্ক্রিয়া বর্ণনা করছে আপন বয়ানে। বয়ান করছে এর পাড়ের নর-নারীর সমাজ, জীবিকা, প্রেম-ভালবাসা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সাহস আর বীরত্বগাথা, দুঃখ-কষ্টের বিষয়। বিবর্তনের বিষয়। শীতলক্ষ্যার নিজের জবানিতে মানুষের প্রকৃতিবিধ্বংসী কাজের কথা ফুটে উঠেছে। দেহ আজ বেদখলে, জল আজ বিষ আর লাশের ভাগাড়। লাশের পর লাশ। স্বার্থপর মানুষেরা অপর মানুষকে কী নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে এর জলের নিচে লুকোতে চায়! মানুষের লাশের ভাগাড় নদীও যে এর দু’পাশের অকৃতজ্ঞ সন্তানদের অর্থলিপ্সার শিকার হয়ে এক জীর্ণ-শীর্ণ লাশে পর্যবসিত এখন। এই সব লাশ কি দুরাচারী মানুষের অনাচার মেনে নিয়েছে? না, মেনে নেয়নি। মেনে নিতে পারে না। এরা এর চরম প্রতিশোধের জন্য উঠে আসছে। আসছে একযোগে।
সিরাজ উদ্দিন সাথী
সিরাজ উদ্দিন সাথী ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন ঢাকা জেলার (বর্তমান নরসিংদী জেলা) পলাশে জন্মগ্রহণ করেন । শৈশব-কৈশাের কেটেছে বর্তমান পলাশ উপজেলায়—এক অপরূপ প্রাকৃতিক নৈসর্গের মাঝে। প্রকৃতি আর মানুষকে নিয়ে তখন থেকে তার অপার আগ্রহ। ঊনসত্তরের উত্তাল ছাত্র আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে ছিল তার সক্রিয় অংশগ্রহণ । অবিভক্ত কালীগঞ্জ থানায় স্কুল পর্যায়ের ছাত্রদের নেতৃত্ব দেন ঐ সময় । একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন অসীম সাহসিকতার সাথে । দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রজীবন কেটেছে চট্টগ্রামে । চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স)সহ এমএ, এলএলবি এবং যুক্তরাজ্যের ওয়েলস্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে কলেজে অর্থনীতির শিক্ষকতা করেছেন । উকিল হতে চেয়েছিলেন, পরে হয়েছেন চাকুরীজীবী । ঘুরেছেন পৃথিবীর অনেক দেশ, দেখেছেন প্রাচীন মানুষের হারিয়ে যাওয়া অনেক সভ্যতা। মানবসভ্যতার আদি এসব নিদর্শন আদিম মানুষ সম্পর্কে তাঁর জানার আগ্রহকে বাড়িয়েছে অনেকগুণ । শান্তিতে নােবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পাদিত এবং গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক ১৯৮১ সালে প্রকাশিত বেলতৈল গ্রামের জরিমন ও অন্যান্য গ্রন্থের অন্যতম সহ-লেখক তিনি । এছাড়া ১৯৯২ সালে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী ও ২০১১ সালে প্রকাশিত পবিত্র মক্কা নগরীর ইতিকথা এবং দাস প্রথা তাঁর লেখা অপর তিনটি গ্রন্থ।