ধু ধু বাংলায় ডাক দিয়ে যায় স্বপ্নের দিনগুলি, যেদিন মিছিলে আমার ভাইয়ের বুকে লেগেছিল গুলি।’ সেই সময়কালেই এই উপাখ্যানের শুরু। ১৯৫২ সাল ২১শে ফেব্রুয়ারি। মিছিলে নেমে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন এই কাহিনীর নায়ক তখনকার মেডিকেলের ছাত্র হাসান। আর তিনি জীবন দিলেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী এক মেজরের গুলিতে। হাসান ভালবাসতেন রুবিনাকে। কিন্তু তিনি যখন জেলে তখন তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সাথে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. হাসান যখন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও নানাভাবে সাহায্য করেন। তখন সেই রুবিনা পাকা গৃহিনী মিসেস চৌধুরী। কিন্তু তার মনে শান্তি নেই স্বামী ও পুত্রের আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে। স্বামী পাকিস্তানী বাহিনীর দালাল আর পুত্র মুক্তিযোদ্ধা। প্রায় বিশ বছর পরে এক দুর্বিপাকের রাতে হাসান ও রুবিনার দেখা হয় নাটকীয়ভাবে। সেটা ছিল রুবিনার এবং তার স্বামীর জীবনের শেষ রাত এবং ডা. হাসানেরও। তবে রুবিনার সন্তানের সামনে ছিল নতুন সূর্যের পূর্বাভাস। এই কাহিনী বলতে গিয়ে বইটিতে এসেছে ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রসঙ্গ, সেই সঙ্গে সমকালীন নানা চিত্র। বইটি রচিত হয়েছে ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করেই।
আমির হোসেন
আমির হোসেন একজন সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি সান-এর সম্পাদক। এর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশ টুডের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক এবং সাপ্তাহিক এই সময়-এর সম্পাদক। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তাঁর আগে ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন বার্তা সংস্থা পিপিআই-এর স্টাফ রিপোর্টার। আর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ‘সংবাদ পর্যালোচনা’র স্ক্রিপ্ট লিখেছেন এবং সাপ্তাহিক বাংলার বাণীর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সেই ক্রান্তিকালের এই ছয় বছর সময়ে তিনি ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি কভার করেন। ইত্তেফাকে তাঁর দায়িত্ব ছিল রাজনৈতিক সংবাদ, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করা। সেই সুবাদে মাত্র ছয় বছরের মধ্যে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের স্বাধীনতা সংগ্রামে উত্তরণ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তর তিনি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন। তাঁর লেখা প্রথম বই মুজিব হত্যার অন্তরালে প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। কিন্তু তৎকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে বইটির লেখক হিসেবে তিনি নিজের নামের পরিবর্তে ‘ইশতিয়াক হাসান’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। তাঁর অন্য দুটি গ্রন্থ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন। কথাসাহিত্যেও তার পদচারণা দেখতে পাবেন পাঠক সূর্যতোরণ এবং যুদ্ধ ও প্রেম ১৯৭১ উপন্যাসের মাধ্যেমে।