ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ মুক্তিযুদ্ধের আগে শুরু করে সম্প্রতিকালের বাংলাদেশে এসে শেস হয়েছে এই উপন্যাস। সময়ের পরিমাপে বিশার ক্যানভাসে দেশের সামগ্রিক পটভূমিতে মফস্বলের এক শহর, সেখানকার কিছু মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, নির্যাতন-অবমাননা এবং এর মধ্যে বেঁচে থাকার করুণ ও দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা কাহিনীকে দিয়েছে মহাকাব্যিক বিস্তার। হিংসা, লোভ, নৃশংসতা, বর্বরতার পাশাপাশি সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব এবং প্রেম-ভালোবাসার মিশ্রণে ইতিহাসের কয়েকটি পূর্ব প্রাণবন্ত হয়েছে রক্ত-মাংসের আদলে যার জন্য এই উপন্যাসকে বলা যায় সেই সময়ের বিশ্বস্ত দলিল। এখানে মুক্তিযুদ্ধ সময়ের এবং উত্তর-স্বাধীনতা পর্বের যে চিত্র পাওয়া যায় তা সংক্ষিপ্ততার মধ্যেই সৃষ্টি করে এমন মানবিক আবেদন যা হৃদয়কে স্পর্শ করে এবং বুদ্ধিবৃত্তিকে নাড়া দিয়ে যায়। সময়ের বিশাল ব্যাপ্তিতে কাহিনীকে যা ঐক্য সূত্রের মতো বেঁধে রেখেছে তা তিন প্রধান চরিত্র, তিন বন্ধুর সম্পর্ক। এই সম্পর্কের পরিণতিতে ট্র্যাজেডি যেমন আছে সেই সঙ্গে আছে ধ্বংস ও মৃত্যুকে অতিক্রম করে ভালোবাসার ও প্রীতির চিরন্তন আশ্বাস। হতাশা, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ব্যর্থতার মধ্যেও উপন্যাসটি তাই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাবাদী এক উচ্চারণ।
খুব বেশি চরিত্র নেই এই উপন্যাসে কিন্তু যে কয়টি আছে তারা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে প্রতিনিধিত্ব করে সব শ্রেণির মানুষের। তাদের এই ভূমিকাই উপন্যসাটির বিশালতা প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এতে যোগ করেছে কালজয়ী মাত্রা। ‘তিন বন্ধু এবং একটি দেশ’ বাংলাদেশের একটি মহাকাব্য।
হাসনাত আবদুল হাই
হাসনাত আবদুল হাই-এর জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায়। পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশাের, ফরিদপুর শহরে । কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনােমিকস্ এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যােগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ১৯৫৮ সালে ছােটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছােটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালােচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল। বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্রবাস জীবনে। প্রকাশিত ছােটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্রমণ-কাহিনী ছয়। সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মােহাম্মদ আকরম খাঁ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং একুশে পদক।