ডাবল স্ট্যান্ডার্ড
লেখক ডা. শামসুল আরেফীন পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও লেখক জগতে অল্প কিছুদিনেই ভালই সুনাম কুড়িয়েছেন। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি দ্বীনের একজন বড় দাঈ। তাই আধুনিক শিক্ষিত মানুষদের মানসিকতা বেশ ভালভাবেই বোঝেন। বোঝেন বর্তমান সমাজের সমস্যার শিকড় কোথায়। তাই উনার এই প্রয়াস। গ্রন্থ পর্যালোচনাঃ বর্তমান আধুনিক সমাজে কোন খবর যতদ্রুত ছড়ানো সম্ভব, তা অতীতে কোন কালেই ছিল না। তাই ভাল কোন খবর যেমন ছড়ায় দ্রুত, তেমনি গুজবও ছড়ায়। অপরদিকে ধর্মীয় শিক্ষাবিহীন যখন আমাদের আধুনিক শিক্ষা, তখন ধর্ম নিয়ে মানুষের ধারণা স্পষ্ট না। ফলে ধর্মীয় বিষয়ে ভুল, অযুক্তি ও মিথ্যা সংবাদ যখন ছড়ায়, তখন সাধারণ মানুষ পড়ে যায় বিভ্রান্তিতে। ইসলামের উপর এই আক্রমণ অনেক আগে থেকেই। নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগ থেকেই এই ধারাবাহিকতা বহাল আছে। বর্তমানে শুধু কৌশল ও মাধ্যম আলাদা। অন্য ধর্মে বা নিজেদের সাথে এই বিরোধীরা একরকম অথচ ইসলামের বেলায় অন্য রকম। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানসিকতা এরা তাদের অন্তরে লালন করে। এই ইসলাম বিরোধী ও তাদের দ্বারা প্রভাবে প্রভাবিত কিছু মানুষ অযথা কিছু আপত্তিকর প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। অথচ এটা সুনির্দিষ্ট যুক্তি ও দলিলসহ ব্যাখ্যা করা যায়। মূলত এই বিষয়কে মাথায় রেখেই লেখক বইটির অধ্যায়গুলো সাজিয়েছেন। ঈমান যেহেতু ইসলামের মূলভিত্তি, তাই লেখক প্রথমেই “না দেখে বিশ্বাস” করা নিয়ে গল্পটি সাজিয়েছেন। আমরা প্রতিনিয়ত না দেখে অনেক বিষয়েরই অস্তিত্ব স্বীকার করি, তাহলে স্রষ্টাকে কেন দেখে বিশ্বাস করা যাবে না! এবং এর স্বার্থকতা কি, তা ব্যাখ্যা করেছেন দালিলিকভাবে। দ্বিতীয় গল্পে ইসলামে দাসপ্রথা নিয়ে যেসব আপত্তি তোলা হয়, সেসবের সুন্দরভাবে খণ্ডন করা হয়েছে। এরপর ইসলামে নারীদের কিছু বিধান নিয়ে বিরোধীদের বেশ কিছু আপত্তিগুলোর যুক্তিপূর্ণভাবে ও দলিলসহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন- নারীদাসিদের সাথে আচরণ, স্ত্রীকে শস্যক্ষেত্র বলার ব্যাখ্যা। সমাজতন্ত্রকে যারা অনেকে সব সমস্যার সমাধান মনে করে, তাদেরকে নিয়ে এরকম একটা গল্প সাজানো হয়েছে। যেখানে একে একে সমাজতন্ত্রের ইতিহাস থেকে শুরু এর উত্থান ও পতন সব গল্পের ছলে তুলে ধরা হয়েছে, যা সাধারণ পাঠকের বুঝতে কোন সমস্যা হবে না। শেষ পর্যায়ে এসে কাল্পনিক সাইন্স ফিকশন গল্পকে কেন্দ্র করে ইসলামের দাওয়াতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। মন্তব্যঃ ইসলামকে অনেকেই শুধু কিছু ইবাদত ও আচার অনুষ্ঠানের ধর্ম মনে করে। আর অনেকে সেকেলে মনে করে। বইটিতে ইসলামের সঠিকরুপটাই তুলে ধরা চেষ্টা করা হয়েছে। গল্পগুলোর প্রেক্ষাপট এমনভাবে সাজানে হয়েছে, যাতে পাঠকের যাতে রসবিহীন মনে না হয়। প্রতিটি পাতায় লেখকে নিখুত পরিশ্রমের চিহ্ন পাঠক উপলব্ধি করতে পারবে। বইটির কভারের পিছনে বলা হয়েছে, যে আপনি মুসলিম বা অমুসলিম, প্র্যাক্টিসিং বা নন- প্র্যাক্টিসিং, নাস্তিক বা আস্তিক যেই হন, বইটা আপনার চিন্তার জগতে অবশ্যই আলোড়ন সৃষ্টি করবে, ইনশাল্লাহ।
অনেক অজানা বিষয় জানতে পরেছি এই বই দ্বারা নাস্তিকরা এসব বিষয় নিয়ে সময় তর্ক করে। তাই ভাল করে জেনে তাদের উত্তর দেয়া উচিৎ আমাদের মুসলিম হিসেবে দ্বায়িত্ব আমরা কোন বিষয় সম্পর্কে না যেনে মুখে মুখে তর্ক বিতর্ক করে থাকি। বইটি পড়লে অনেক কিছুই আপনার চোখের সামনে চলে আসবে। বইটি থেকে আমি অনেক কিছু সঠিক জানতে পেরেছি। ভালো একটি বই । অসাধরন বই পড়া উচিৎ সবার।
আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। ইসলাম কেবলমাত্র একটি ধর্মই নয় বরং এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। এখানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে করণীয়- বর্জনীয় সব কিছু আলোচনা করা হয়েছে। ইসলামের এমন কোন বিধান নেই যা মানব সভ্যতার জন্য অকল্যাণকর। ইসলামী বিধান পালনে করলে নেই কোন ক্ষতিকর সাইড ইফেক্ট। এত কিছুর পরেও ইসলাম বিরোধী অপশক্তি তথা নাস্তিক ও সেক্যুলার সমাজ ইসলাম কে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে কুরআন ও হাদীসে দেয়া ইসলামের বিধানগুলো নিয়ে মানুষের মাঝে সংশয়ের সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষ তাদের ধোকায় পতিত হচ্ছে । কেউবা এসবের উত্তর খুজতে গিয়ে নাস্তিকদের পাতানো ফাদে পা দিচ্ছে। বর্তমান মুসলিম সমাজও অবাধ স্বাধীনতা ও তথ্য প্রবাহের এই যুগে ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে ব্যর্থ। কিন্তু ইসলাম কে বুঝতে হলে নাস্তিকদের যুক্তি দিয়ে বুঝানোর দরকার নেই। কেননা ইসলাম কোন যুক্তির ধর্ম না। বরং যুক্তি যেখানে শেষ সেখান থেকেই ইসলামের শুরু। ইসলাম থেকে খুজে নিতে হয় কল্যান। যে ইসলাম দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান লাভের একমাত্র মাধ্যম। ইসলামের বিধান বুঝার ক্ষেত্রে যুক্তি ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কার্যকারিতা আছে । কিন্তু সেটা একমাত্র মানদন্ড নয়। কেননা যুক্তি ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সাথে এগুলো সর্বদা পরিবতনশীল । পক্ষান্তরে ইসলাম শাশ্বত জীবনব্যাবস্থা। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধনীতি সহ সর্বক্ষেত্রে ইসলাম স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। এই নীতিমালা সামনে রেখেই ডা: শামসুল আরেফিন রচনা করেছেন একটি অনন্য বই " ডাবল স্টান্ডার্ড "। বইটি নাস্তিকদের যুক্তি ও অপব্যাখায়া গুলোর প্রতিবাদ করেই লেখা। আস্তিক নাস্তিক বিভিন্ন চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বইটিতে মোট এগারোটি গল্প সন্নিবেশিত আছে । মন কে নাস্তিকদের বোনা অবিশ্বাসের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে একই সাথে বিশ্বাসের ভিত্তি মজবুত করার জন্য লেখক এখানে শব্দের পর শব্দের পশরা সাজিয়েছেন। কখনো বিজ্ঞান, কখনো ধর্ম, আবার কখনো যুক্তি, দর্শন, ও ইতিহাসের সাহায্যে তথ্যগুলোকে সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। বইটির প্রতিটি গল্পই নাস্তিকদের বিভিন্ন সন্দেহ ও সংশয়ের জবাবে এক একটি হাতিয়ার স্বরুপ।
#Book_Review নামঃ ডাবল স্টান্ডার্ড লেখকঃ ডা. শামছুল আরেফীন প্রকাশণীঃ মাকতাবাতুল আযহার আরিফ আজাদ ভাইয়ের প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ পড়ার পর এইরকম আরো কয়েকটা বই পড়তে চাইছিলাম। ডাবল স্টান্ডার্ড বইটিতেও নাস্তিকদের যুক্তি খন্ডন করা হয়েছে। আমাদের সমাজে অনেকেই দাসপ্রথা, দাসীদের সাথে যৌনমিলনের যুক্তিকতা এসব বুজিনা। তাছাড়া নাস্তিকরা প্রায়ই দাসীদের সাথে যৌনমিলন নিয়ে কটুক্তি ও সন্দেহ পোষণ করে। তাদের এইসব কটুক্তির জবাব রয়েছে এই বইতে। জিজিয়া কর ও দাড়ির রাখার প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা নিয়েও বইতে বলা হয়েছে। অনেক না জানা জিনিসের উত্তর পেয়েছি বইতে। আমার পছন্দের কিছু টপিকস হলো দাসপ্রথা,দক্ষিণ হস্ত মালিকানা, জিজিয়া কর, বনু কুরাইযা হত্যা, পরিপূর্ণ দাড়ি ইত্যাদি। প্রচ্ছদমূল্যঃ ২৬০ টাকা
আমি বলি কি বইটি পড়া উচিত। আমরা কোন বিষয় সম্পর্কে না যেনে মুখে মুখে তর্ক বিতর্ক করে থাকি। বইটি পড়লে অনেক কিছুই আপনার চোখের সামনে চলে আসবে। বইটি থেকে আমি অনেক কিছু সঠিক জানতে পেরেছি। ভালো একটি বই ।