ভূমিকা
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের একটা বিরাট অংশ তাদের শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকেই শিক্ষক কিংবা অভিভাবকের কাছ থেকে জানতে পারে যে অঙ্কে তার মাথা ভালো নয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় তারা প্রথম এই কথাটি শোনে, তারপর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই একই কথা আরো অনেকবার শোনে। তাদের কেউ কেউ নিজেরা অঙ্কে (গণিতে) ভালো হওয়ার চেষ্টা করে, পরিশ্রম করে পরীক্ষার হলে যায়, এবং তারপর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে না। একসময় শিক্ষার্থীরা আসলেই বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, “আমি গণিতে দুর্বল”।
এই গণিতে দুর্বলতার বিষয়টি আমাদের শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসে অত্যন্ত নেতিবাচক ভূমিকা রাখে। যখনই যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগের বিষয় আসে, যখনই গাণিতিক বিশ্লেষণের বিষয় আসে, তখনই তারা ধরে নেয় যে, সেই জিনিসটি তাদের দিয়ে হবে না। তাই তো আমরা হরহামেশাই এমন প্রশ্ন পাই, “ভাই, আমার প্রোগ্রামিং শেখার অনেক ইচ্ছা। কিন্তু আমি তো গণিতে দুর্বল। আমি কি প্রোগ্রামিং শিখতে পারব?”। কেবল প্রোগ্রামিং নয়, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে জাতি হিসেবে আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে গণিতে দুর্বলতা কিংবা দক্ষতার অভাব।
গণিতে দক্ষতা অর্জন করতে তিনটি জিনিস প্রয়োজন। সেগুলো হচ্ছে পড়া, উপলব্ধি করা ও অনুশীলন করা। গণিত বইতে কেবল অনুশীলনীর প্রশ্নগুলোর উত্তর বা সমাধান করলেই হবে না, বরং বই ভালোভাবে পড়তে হবে। আর পড়ার সময় গল্পের বই কিংবা খবরের কাগজ পড়ার মতো পড়লে হবে না, পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী পড়ছি, সেটি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। তো আমাদের স্কুলের গণিত বইগুলোতে অনুশীলনী আছে, অনুশীলনীর আগে আলোচনাও আছে (যদিও অনেক শিক্ষার্থীই সেই আলোচনা পড়ে না)। যেই জিনিসটি দরকার, সেটি হচ্ছে সবকিছুকে একই সুতোয় গাঁথা। গণিতের কোন জিনিসটি কেন শিখছি, সেটি কী কাজে লাগছে-এই বিষয়টি উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
এই বইয়ের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করেছি যেন শিক্ষার্থীরা গণিতের মৌলিক ধারণাগুলো উপলব্ধি করতে পারে। সংখ্যা কীভাবে এল, মানুষ কীভাবে গুণতে শিখলো, সেই আলোচনা থেকে শুরু করে আমরা বীজগণিতের ধারণা, ঐকিক নিয়ম, উৎপাদক ও মৌলিক সংখ্যা, পরিসংখ্যান, সম্ভাব্যতা, সেট, ফাংশন, লগারিদম ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কোথাও সংক্ষিপ্ত, আর কোথাও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা কিন্তু বইতে গণিত শেখানোর চেষ্টা করি নি। তাই এই বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিংবা পড়ার পরে শিক্ষার্থীদের উচিত হবে স্কুলের গণিত বইগুলো পড়া এবং অনুশীলন করা। তাহলে এই বই পড়ে কী লাভ হবে? এই বইটি পড়ার পরে স্কুলের গণিত বইগুলো আর রহস্যময় কিংবা দূর্বোধ্য মনে হবে না। বরং তখন শিক্ষার্থীরা জানবে তারা কোন জিনিসটি কেন শিখছে এবং শেখার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে। আর বইতে গণিতের কঠিন বাংলা শব্দগুলোকে সহজ ভাষায় পাঠকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি-তাই সেই বাংলা শব্দগুলো গণিত শেখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
আমাদের দুজনের কেউই গণিতবিদ কিংবা গণিত বিশেষজ্ঞ নই-আমাদের লেখাপড়ার বিষয় কম্পিউটার বিজ্ঞান। যেহেতু বাংলাদেশে প্রোগ্রামিংকে জনপ্রিয় করার পেছনে আমরা কাজ করছি, তাই বইতে কয়েক জায়গায় সি কিংবা পাইথন ভাষায় কিছু প্রোগ্রামও লিখে দিয়েছি, যেন শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়েও কিছুটা উৎসাহ পায়। তবে বইটি পড়ার জন্য প্রোগ্রামিং জানার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ইতিমধ্যে প্রোগ্রামিং কিছুটা শিখেছে, তারা সেই প্রোগ্রামগুলো দেখতে পারে, বাকিরা না দেখলেও চলবে।
বইটি পড়ে শিক্ষার্থীরা যদি গণিতে আনন্দ খুঁজে পায়, যদি তাদের গণিতভীতি দূর হয়, যদি তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গণিত শেখার চেষ্টা করে, তাতেই আমাদের আনন্দ ও তুষ্টি। শিক্ষার্থীদের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা রইল।
সূচীপত্র
ভূমিকা
লেখক পরিচিতি
অধ্যায় ১ : সংখ্যা ও গণনা
• পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সংখ্যা আর বড় সংখ্যা
• সংখ্যারেখা
• জোড় ও বিজোড় সংখ্যা
• গাণিতিক অপারেশন
o যোগ
o বিপরীত সংখ্যা
o বিয়োগ
o গুণ
o ভাগ
o ভগ্নাংশের যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ
o উলটো সংখ্যা
অধ্যায় ২ : বীজগণিতের প্রাথমিক ধারণা
অধ্যায় ৩ : ঐকিক নিয়ম
অধ্যায় ৪ : উৎপাদক ও মৌলিক সংখ্যা
• মৌলিক সংখ্যা
অধ্যায় ৫ : গসাগু ও লসাগু
• গসাগু
• লসাগু
অধ্যায় ৬ : শতকরা
• পার্সেন্টাইল
অধ্যায় ৭ : গড়, মধ্যক ও প্রচুরক
• গড়
• মধ্যক
• প্রচুরক
অধ্যায় ৮ : সম্ভাব্যতা
অধ্যায় ৯ : সেট
• সেটের বিভিন্ন চিহ্ন :
অধ্যায় ১০ : লেখচিত্র
অধ্যায় ১১ : ফাংশন
অধ্যায় ১২ : লগারিদম
অধ্যায় ১৩ : গণিত শেখার শুরু
তামিম শাহরিয়ার সুবিন
তামিম শাহরিয়ার (ডাকনাম: সুবিন)-এর জন্ম ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর ময়মনসিংহে। গ্রামের বাড়ি কুমিলা জেলার চান্দিনা উপজেলার হারং গ্রামে। তাঁর বাবা মাে: মােজাম্মেল হক ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা ফেরদৌসি বেগম গৃহিণী। স্ত্রী সিরাজুম মুনিরা ও পুত্র আরাভ শাহরিয়ারকে নিয়ে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন।
লেখাপড়া করেছেন হােমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এ কে উচ্চ বিদ্যালয়, নটর ডেম কলেজ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ে। ২০০৬ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন বিভিন্ন প্রােগ্রামিং প্রতিযােগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। পরবর্তী সময়ে (২০০৭ ও ২০০৮ সালে) তিনি এসিএম আইসিপিসি ঢাকা রিজিওনাল-এর বিচারক ছিলেন। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন মুক্ত সফটওয়্যার লিমিটেড ও দ্বিমিক কম্পিউটিং। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডে একজন একাডেমিক কাউন্সিলর। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে গ্র্যাব নামক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
তাহমিদ রাফি
তাহমিদ রাফি– এর জন্ম ১৯৮৮ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকা জেলায়। তিনি সেন্ট যোসেফ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে মাধ্যমিক ও নটরডেম কলেজ থেকে ২০০৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০০৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ৪৬-তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশনগ্রহণকারী প্রথম বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ২০১২ সালে। স্নাতক সম্পন্ন করে তিনি কিছুদিন সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তি সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারের জন্য তামিম শাহ্রিয়ার সুবিনের সঙ্গে তিনি সহ-প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিমিক কম্পিউটিং। এর কিছুদিন পরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিমিক প্রকাশনী। প্রকাশনীর মাধ্যমে তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন বই তৈরী করেছেন। সমসাময়িক সময়ে তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বেসিস বিআইটিএম, বিডিওএসএন, কোড ইট গার্ল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত প্রোগ্রামিং ট্রেনিং প্রোগ্রামে ইন্সট্রাকটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।