জলপিপি - অরুণ কুমার বিশ্বাস | বইবাজার.কম

জলপিপি

    5 Ratings     1 Reviews

বইবাজার মূল্য : ৳ ২২৫ (২৫% ছাড়ে)

মুদ্রিত মূল্য : ৳ ৩০০

প্রকাশনী : অন্যপ্রকাশ





WISHLIST


Overall Ratings (1)

শেখ মোহাম্মদ জিহাদ
14/09/2019

মূল চরিত্র: ভিকটিম গগন চৌধুরী, ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়, ক্রাইম রিপোর্টার শুভ, ইন্সপেক্টর নাজির হোসেন, অলোকের প্রেমিকা উর্বী বোস, গগনের ১ম স্ত্রী আরজু বেগম এবং ২য় স্ত্রী আনিলা। ভূমিকা: জলপিপি উপন্যাসটি একটি ডিটেকটিভ উপন্যাস। মূলত এই বইটায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডিটেকটিভ অলোকেশ রয়ের যুক্ত হওয়া এবং খুনিকে উদ্ঘাট করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসে অপরাধ জগতের সব চরিত্র । শেষে অপরাধ চক্রে জড়িত সকল ঘটনার আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং কাহিনীর সমাপ্ত হয়। তবে উপন্যাসটিতে গোয়েন্দা চরিত্রের পাশাপাশি অলোকেশ রয়ের প্রেমের সম্পর্কেও বেশ প্রাধান্য দিয়েছেন লেখক, যা উর্বী বোস চরিত্রে লক্ষণীয়,যদিও কেসটা সমাধানে তার যথেষ্ট অবধান ছিলো। রিভিউ: উপন্যাসটির শুরুতেই অলোকেশ রয় নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে একটা আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করার জন্য গনন চৌধুরীর পত্রিকায় দেওয়া পয়েন্ট টু-টু বোর স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন কোম্পানীর সেমি অটোমেটিক ফায়ার আর্মস বিক্রির বিজ্ঞাপনটা দেখে গগন চৌধুরীর বাড়িতে ফোন করেন এবং ঠিক সে মুহূর্তেই অলোকেশের ফোনটা রিসিভ করেন তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর নাজির হোসেন। তখন সে জানতে পারে বিজ্ঞাপন দাতা গগন চৌধুরী খুন হন, এবং একটা আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করার সূত্র ধরে অন্যতম সাসপেক্ট হিসেবে তাকেও এই কেসের সাথে জড়িয়ে ফেলেন ইন্সপেক্টর নাজির। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে অলোকেশ রয় এই কেসের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। সাথে তার সহযোগী ক্রাইম রিপোর্টার শুভ। আইনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অলোকেশের বেশ ভালো সম্পর্ক আছে এবং পরে ইন্সপেক্টর নাজির জানতে পারে অলোকেশ রয় একজন পেশাদার গোয়েন্দা। নিজেই যেহেতু সে এই কেসের সাথে জড়িত, পুলিশি ঝামেলা থেকে রেহায় পেতে তাকে এই কেস খোলাসা করতে হবেই। ইন্সপেক্টর নাজিরও তার সহযোগী হিসেবে খুনিকে খুঁজে বের করতে তার দায়িত্ব থেকে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছেন তিনি, কারণ ভিকটিম গগন চৌধুরী কোনো সাধারণ মামুলি লোক নয়, উপরমহলে তার অনেক নামডাক আছে। অলোকেশ জানতে পারে গগন চৌধুরী একজন নামীদামী মানুষ। তিনশ’ কোটি টাকার মালিক তিনি। গগনের লাশকে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে তার লাশের পোস্টমর্টেম শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার সময় গননের সম্পর্কে আরো জানতে পারে অলোকেশ রয়। গগন চৌধুরীর দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী আরজু বেগম, বয়স চল্লিশের উপরে। তার অটিস্টিক ছেলে কাজল। আর দ্বিতীয় স্ত্রী সুশ্রী আনিলার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। আরজু বেগমের কাছ থেকে জানতে পারে গনন একটা জানোয়ার, নিজের ছেলে কাজলকেও সে অস্বীকার করে। আর আনিলা অর্থলোভে গগনের কাছে বিয়ে বসেছে। এছাড়াও গগন চৌধুরী বৈধ-অবৈধ নানা কাজে সম্পৃক্ত। তিনি আদতে খুন হয়েছেন না সুইসাইড করেছেন, তা নিয়ে গোয়েন্দা অলোকেশের প্রথম থেকেই মত বিরোধ আছে। ব্যালিস্টিক রিপোর্ট মোতাবেক গগন চৌধুরী নিজের পিস্তলের গুলিতেই নিহত হোন কিন্তু ইন্সপেক্টর নাজির তা মানতে নারাজ। তার বর্তমান সাসপেক্ট আরজু বেগম এবং আনিলা। গগন চৌধুরীর ঘর তদন্তের সময় তারা আরেকটি বুলেট খুঁজে পায় এবং সেটা গগন চৌধুরীর পিস্তল থেকে ছোঁড়া পয়েন্ট টু-টু বোরের বুলেট নয়, থ্রি-টু বোরের বুলেট। আর কিছু কাচের টুকরো পায় অলোকেশ। ইতিমধ্যে আনিলার হয়ে কেসটা নিয়ে নেয় সে। এবং এই কেসের তদন্তে গগন চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নলুয়া থেকেও অলোক আর ইন্সপেক্টর নাজির খোঁজ নেন। কিন্তু বিশেষ কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি তারা। গগনের বাড়ির মালি আবদুল এবং আনুর নানুকে তালাস করে তেমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়নি অলোকেশ। আনিলা বিশেষ সাসপেক্ট হিসেবে সন্দেহের তালিকায় থাকায় উর্বীও এই কেসে জড়িয়ে পড়ে। মূলত এই কেসের শুরু থেকে উর্বীকে বিস্তারিত সব বলায় সে অলোককে সাহায্য করতে কেসের সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং মিডিয়ার লোক সেজে আনিলার সাথে একপ্রকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে ফেলে। শুভর পরিচিত গফুর চাচার ঘড়ির দোখান থেকে তারা জানতে পারে ঘড়িটি অনেক দামি বিদেশি রোলেক্স সেলিনি ঘড়ি। এতে খুনি খুব ধনী কেউ একজন হবে অলোকেশ তা আন্দাজ করে । এছাড়াও গগন চৌধুরীর আরো অনেক শত্রু আছেন। রাফাত আলম রফু গগন চৌধুরীর বিশেষ শত্রু, গগন তার কোটি টাকার মাল মেরে দিয়েছে। মামুন মোড়ল প্রতিপক্ষ। ইতিমধ্যে আরজু বেগম অলোকেশকে একটা ডায়েরি পড়তে দেয় এবং সে ডায়েরিতে গগন চৌধুরীর সব কুকীর্তি তুলে ধরেছেন আরজু। তার নারী লিপ্সার কারণে আনিলা, অহনা এবং মৌপিয়ার মতো মেয়েও তার লালসার স্বীকার হয়েছে এবং গগন যে মোটেও ভালো মানুষ ছিলোনা, তা তার ডায়েরিতে স্পষ্ট। গগনের প্রতি পুরো ডায়েরিতে ঘৃণার প্রকাশ এবং তার স্পেশাল চাইল্ড কাজলের কথা, যাকে সে ছেলে বলে স্বীকার করতো না। কাজলের প্রতি ইন্সপেক্টর নাজিরের পিতৃত্ববোধ জেগে উঠা এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে সন্দেহের তীরটা আরজু বেগমের কাছ থেকে সরে এসেছে। উর্বী আনিলার বাড়িতে গিয়ে গোপন সূত্রে জানতে পারে আনিলার বয়ফ্রেন্ড রাজিব রায়হান ওরফে রাজুর সাথে তার আরজু বেগমকে মেরে ফেলার ব্যাপারে কথোপকথন হচ্ছে। এবং পেশাদার খুনি খুররম কনট্র্যাক্ট কিলারকেও ভাড়া করার সিদ্ধান্ত হয়েগেছে। এছাড়াও আনিলার এক্স-স্বামী আলমগীরের ব্যাপারেও জানাগেছে। গগন চৌধুরীর কেসের সাথে জড়িত সন্দেহের তালিকায় থাকা তার সব শত্রুকে উঠিয়ে এনেছেন ইন্সপেক্টর নাজির । এবং আনিলাকে এই কেসের অন্যতম সাসপেক্ট হিসেবে ভেবে নিয়েছে অলোক, কিন্তু ইতিমধ্যে আনিলাও খুন হয়ে যায়। অনিলা থ্রি-টু বোরের গুলিতে খুন হয়। এতে গগন আর আনিলার খুনি একই যোগসূত্র বাঁধা নির্ণয় হয়। আনিলা খুন হওয়া এবং আরজু বেগমের ডায়েরির মাঝখানের একটা পেইজ না থাকাটা অনেকটা গোলক ধাঁধার মত হয়ে গেছে অলোকেশের কাছে। ইন্সপেক্টর নাজির তার ভূমিকা পালন করে সব সন্দেহের তালিকার থাকা অপরাধীদের শাসিয়ে ও কোনো খুনির সন্ধান মিলেনি। শেষে আরজুর ঘর থেকে উর্বী কৌশলে ছেঁড়া পাতাটা উদ্ধার করে এবং রোলেক্স সেলিনি ঘড়ির মালিক সুরুজ মিয়াও ধরা পড়ে। … গোয়েন্দা অলোকেশের প্যাঁচের কাছে অবশেষে আরজু বেগম তার অপরাধ স্বীকার করেন। মূলত সেদিন ইতালিয়ান ডলসি গাবানা লিপস্টিক লাগানো টিস্যুপেপারের শেইলোস্কপির মাধ্যমে আরজু বেগম ধরা পড়ে। গগন চৌধুরীর মৃত্যুর সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু সুরুজ এবং আরজু গগন কে হত্যা করেনি। তাদের মধ্যে গোলাগুলি হলে গগন চৌধুরীর মৃত্যু হয় তার হাত থেকে ছোঁড়া গুলি রিকোশে বুলেটের সুইং ব্যাক এর কারনেই হয়েছে। এবং তা যে সুইসাইড নয় অলোকেশের প্রথম থেকেই ধারনা কারন গুলি তার ডানবুকে লেগেছিলো এবং তার ডান হাত থেকেই পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রটা উদ্ধার করেন। কিন্তু আনিলাকে আরজু বেগমই মেরেছেন। আরজু বেগম সুরুজ মিয়ার সাথে আগেই প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িত ছিলো। তার টাকার লিপ্সা কম ছিলোনা। এবং আলিনার প্রতি প্রতিহিংসা ভিতরে ভিতরে ছিলো। যা প্রকাশ পেয়েছে খুনের মাধ্যমে। নামকরণ: জলপিপি বকজাতীয় একরকম পাখি বিশেষ। এদের প্রেমিকপাখি ও গোয়েন্দা পাখি বলা চলে। উপন্যাসের বিশেষ চরিত্র অলোকেশের প্রেমিকা উর্বী বোসকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটির নামকরণ করা হয়েছে, কারণ কেসটি সমাধানে তার যথেষ্ট অবধান ছিলো এবং অলোক তাকে ভালোবেসে জলপিপি বলে ডাকে। সে ক্ষেত্রে নামকরণের স্বার্থকতা বজায় রেখেছেন লেখক। পাঠ-প্রতিক্রিয়া : গোয়েন্দা গল্প পড়তে কার না ভালো লাগে! পড়তে পড়তে রহস্য আর একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনার মীমাংসা। তবে লেখক মাত্র একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে ভালোলাগার চরিত্রের মধ্যে আমার ইন্সপেক্টর নাজিরকে বেশ লেগেছে, উপন্যাসটিতে একজন পিতৃত্বহীন পিতার এক অটিস্টিক ছেলের প্রতি পিতৃত্ব বোধ জেগে উঠা সত্যি এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের ইঙ্গিত করে। এবং পুলিশ হলেও নাজির বেশ ভালো মনের মানুষ ছিলেন । অটিজমে আক্রান্ত শিশু মানেই সমাজের বোঝা নয়। এটুকু অন্তত তার চরিত্রে আমরা বুঝতে শিখেছি। আর একেবারে পড়তে পড়তে থ্রিলার নয় উপন্যাসটা। গোয়েন্দা চরিত্রের পাশাপাশি লেখক অলোককে প্রেমের চরিত্রে ঢুকিয়ে দিয়েছেন এবং বেশ প্রাধান্য দিয়েছেন উর্বী আর অলোকের সম্পর্ককে। গোয়েন্দা গল্পে প্রেম ভালোবাসা তেমনটা চোখে পড়েনা বললেই চলে, সে দিক থেকে উপন্যাসটা অন্য ধাঁচের। লেখক দু-দিককে প্রাধান্য দিয়ে নতুন কিছু তুলে ধরেছেন । যদিও বেশির ভাগ পাঠকই একচেটিয়া গোয়েন্দা গল্প পড়তে অভ্যস্ত। আর উর্বী চরিত্রেও ন্যাকামি ভাবটা ভালো লাগেনি। উপন্যাসটার প্রায় অর্ধেকটা পড়ে ও তেমন আকর্ষিত হয়নি। তবে শেষের দিকে পরপর ঘটতে থাকা কাহিনী চুম্বক আকর্ষিত করবে এবং আস্তে আস্তে পাঠকের ভালো লাগা কাজ করবে উপন্যাসটার প্রতি। একদম শেষে এসে দারুণ চমক পাবে পাঠক। ব্যক্তিগত মতামত : লেখক চাইলে আরেকটু সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় শব্দের অভিপ্রকাশ ঘটাতে পারতেন। অধিক জটিল শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয় এবং অধিক ইংরেজি ও হিন্দি ভাষারও সংমিশ্রণ হয়েছে। কিছু কিছু অপ্রচলিত শব্দ সাধারণ পাঠকদের বুঝতে অসুবিধেও হতে পারে হয়তো। আর বইটার কয়েকটা ভুল চোখে পড়েছে। এছাড়া বইটি খুব সাজানো গোছানো ভাবে শব্দের অভিপ্রকাশ ঘটিয়েছেন লেখক এবং প্রতিটি চরিত্রেই বিশেষত্ব দিয়েছেন। প্রিয় উক্তি: (১)আমাদের বয়স যত বাড়ে আমরা তত অভিজ্ঞ হই। তাতে মগজের প্রাচুর্য বাড়লেও সৌন্দর্য আনুপাতিক হারে কমতে থাকে। কিন্তু যারা বইবিমুখ ও কূপমণ্ডূক, তাদের দুটোই কমে; (২) ভাব-ভালোবাসা বা শ্বাস-প্রশ্বাস সব এই বুকে। বুকে যার লোম নেই, তাকে বলি সীমার। বুকে যার অঢেল ভালোবাসা, তাকে বলি মহামানব; (৩) জীবনের হিসেব খুব একটা মেলে না। যতই অঙ্ক জানুক, শেষমেশ শুভংকরের ফাঁকি থেকে যায়; (৪) তুমি আগুন নিয়ে খেললে পুড়বেই। যদি খুব চালাক হও, সেক্ষেত্রে না পুড়ে হয়তো ছ্যাঁকা খাবে। একেবারে নিষ্কলুষ থাকার জো নেই। বইয়ের নাম: জলপিপি; লেখক: অরুণ কুমার বিশ্বাস; ধরন: রহস্য ও গোয়েন্দা; প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ #বইবাজার_মাসিক_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_সেপ্টেম্বর_২০১৯


PAYMENT OPTIONS

Copyrights © 2018-2024 BoiBazar.com