ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কবি নাসির আহমেদ। সমসাময়ি বাংলা কবিতার আলোচনায় বারবার প্রতিধ্বনিত এই নাম। ঈর্ষণীয়ভাবে কবিতা নির্মাণের সহজাত ক্ষমতার অধিকারী সত্ত্র দশকের অন্যতম প্রধান কবি নাসির আহমেদ সেই স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল কবি, যিনি একই সঙ্গে গভীর কল্পনা আর রূঢ় বাস্তবতার সংশ্রিণে আশ্চর্য কুশলতায় কবিতাকে করে তোলেন সমকালের এবং শ্বাশতের শব্দচিত্রকল্প। ১৯৮৫ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের দুই দশকের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আরও অন্তন ১৪টি কাব্যগ্রন্থ। কবিতার আঙ্গিক, বিষয়বস্তু আর কাব্যভাষার ক্ষেত্রে নিরন্তর নতুনত্বের অন্বেষণ তাঁর কবিতাকে করেছে বহমাত্রিক বৈচিত্র্যের এবং বর্ণিল শিল্পমিউজিয়াম। একই সঙ্গে প্রেম, দার্শনিকতা, অধ্যাত্নচেতনা আর সমকালের মানুষের স্বপ্ন হতাশা, দুঃশাসনে ক্ষত-বিক্ষত স্বদেশ ও বিশ্বরাজনীতি কীভাবে শিল্পের সার্থক উপকরণ হয়ে উঠতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাসির আহমেদ- এর কবিতা। আপাত সরল বাক্যের অন্তরালে বহুমাত্রিক রূপক অর্থব্যঞ্জনা সংযোজন করে কবিতাকে শিল্পগভীরতায় পৌঁছে দেয়া তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় সমকালীন বাংলা কবিতা থেকে প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া লিরিসিজমকে নাসির দুঃসাহসেই গভীর কবিতার অনিবার্য অলঙ্কার হিসেবে পরিয়ে দি,য়েছেন বাক্যলক্ষ্ণীর কণ্ঠে। প্রখর ছন্দ্র সচেতনতা, বাক-পরিমিতিবোধ এবং ঐহিত্র্যের সঙ্গে আধুনিকতার সংমিশ্রণ তাঁর কবিতার অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। নারী প্রেম আর স্বদেশ প্রেম সমান্তরাল রেখায় প্রবাহিত তাঁর কবিতায়। একাত্তরের মহান মুক্তিসংগ্রামের চেতনা এতটাই বিস্তৃত তাঁর কবিতায় যে, প্রখ্যাত চিন্তাবিদ প্রফেসর মুস্তাফা নূরউল ইসলাম তাঁর একাত্তরের পদাবলী আলোচনা করতে গিয়ে তাঁকে অভিহিত করেন ‘একাত্তরের ভগীরথ’ বিশেষণে। ‘বৃক্ষমঙ্গল’ লিখে চমকে দেন তিনি সমকালের প্রধান কবি থেকে তরুণতম কবিদেরও।
প্রায় তিন দশকের নিরলস সাধনায় তিনি যে কাব্য ফসল ফলিয়েছেন, তা এক মলাটের মধ্যে পাবার পিপাসা এই কবির অনুরাগীদের থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সে লক্ষে তাঁর সম্প্রতি লেখা অগ্রন্থিত কবিতা ও গ্রন্থিত কাব্যগ্রন্থসমূহের কবিতা নিয়ে ‘কাব্যসমগ্র’ পর্যায়ক্রমে প্রকাশের এ আয়োজন। সমকালের একজন গুরুত্বপূর্ণ কবিকে পরিপূর্ণভাবে জানা ও তাঁর কাব্যের পূর্ণাঙ্গ আস্বাদ লাভের এ এক চমৎকার সুযোগ। প্রিয় পাঠক আপনাদের সহযোগিতায় এ প্রয়াস সার্থক হবে, সে আশাই আমাদের।