বস্তিশহরে এখন মধ্যরাত পা টিপেটিপে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে ছছাটোরা। কোথাও বিদ্যুতের আলাে নাই, জ্যোৎস্নার আলােও না কিন্তু ছােটোদের কাছে আলাে আছে। নিঃশব্দ পায়ে হেঁটে ওরা বস্তিশহরের পুকুরপাড়ে জড়াে হয়। আগের দিন সুধাময় বলে দিয়েছিল, আমি একটি শব্দ করব। বড়ােরা সেই শব্দ শুনতে পাবে না। শুধু তােদের কানে সেই শব্দটা টুনটুন করে বাজবে হালকা মৃদু বাজনা। সেই বাজনা শুনে তােদের চোখ খুলে যাবে। তােরা চোখ খুলে দেখবি শব্দটা থেকে রং বের হচ্ছে। সেই রঙের নাম আমরা জানি না। আমরা যেসব রং দেখি সেরকম রং
একদম অন্যরকম রং। সেই শব্দের রঙে ঘরে আলাে ফুটে উঠবে। সেই আলােয় তােরা বের হয়ে আসবি।
যে শিশুরা হাঁটতে বা কথা বলতে পারে না তারা বাদে সবাই ঘরের বাইরে চলে এসেছে। ওদের পায়ে জুততা নেই। সেই জন্য বস্তিশহরে খটখট শব্দ ওঠে না। আর শব্দ উঠলেও কিছু হতাে না। কারণ বড়ােরা ঘুমে আচ্ছন্ন। সারাদিনের কাজের পর ভীষণ ক্লান্ত।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক, যিনি ১৪ জুন ১৯৪৭ তারিখে রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এ কে মোশাররফ হোসেন ছিলেন রেশমশিল্প কারখানার পরিচালক এবং মাতা মরিয়মন্নেসা বকুল। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময়ে লেখালেখির শুরু করেন এবং তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ "উৎস" ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয়। সেলিনা হোসেনের লেখালেখির কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য, এবং তিনি বাংলার লোক-পুরাণের চরিত্রসমূহকে নতুনভাবে তুলে এনেছেন। তাঁর উপন্যাসে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ প্রতিফলিত হয়েছে। সাহিত্যে তাঁর পরিচিতি শুধু কথাসাহিত্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রবন্ধেও তিনি শক্তিশালী ও শাণিত গদ্য নির্মাণে দক্ষ।