ফ্ল্যাপে লেখা কথা আমার ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে যাবার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু এ সৌভাগ্যের দুয়ার আমাকে উন্মোচন করে দিয়েছেন শাকুর মজিদ। যারা তার ‘আমিরাতে তেরোরাত’ , আমেরিকা : কাছের মানুষ দূরের মানুষ’, ‘হো চি মিনের দেশে’, ‘পাবলো নেরুদোর দেশে’, ‘সক্রেটিসের বাড়ি’ ও ‘কালাপানি’ পড়েছেন তারাও আমর মনে হয় শাকুরের সাথে ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন। শাকুরের দেশভ্রমণ শুধু বিলাসী দেশ ভ্রমণ নয় বা প্রাকৃতিক দৃশ্য, নিসর্গ ঐশর্য এবং নান্দনিক ঐশ্বর্যে বিস্ময় মুগ্ধ হওয়া নয়। যেখানেই তিনি গেছেন সেখানেই তিনি একজন গবেষক, একজন ঐতিহাসিক, একজন সমাজবিজ্ঞানী নৃ-তাত্ত্বিক বিশ্লেষক, পুরাতত্ত্ববিদ ও অনুসন্ধিৎসু। শাকুরের ক্যামেরা মেন জীবন্ত তেমনি তার গদ্যভাষা প্রাঞ্জলল ও প্রাণবন্ত। তিনি পরিচ্ছন্ন গদ্য লিখেন। ঘটনা কাহিনী ও অভিব্যক্তিময় উপস্থাপনায় শাকুর মজিদ নিখুঁত কলা-নৈপুণ্যের অভিধায়ক। নাটকীয়তা, কাব্যময়তা এবং অভিযোজিত আকর্ষণে তার উপস্থাপিত ঘটনা ও বিষয়বস্তু হৃদয়স্পর্শী ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। অসংখ্য চিত্রময়তা আর কারুময়তা তার শিল্পকর্মে অজস্র নান্দনিক ঐশর্যে দ্যুতিময় হয়ে আলো ছড়ায়। শাকুর মজিদের ভাষা আলোচনা প্রসঙ্গে আমাকে জিজ্ঞাসু ও অনুসন্ধিৎসু করে তুলে। দুর্গাদেবীর দশহাত দশদিকে প্রসারিত। কিন্তু শাকুরের হাত কটি? একই হাতে কি তার স্থপতি নান্দনিকতা, ক্যামেরায় ছবি উজ্জ্বলতা ও পেলবতা সাহিত্যে কলা নৈপুণ্যের পূর্ণতা। মাঝে মাঝে মিলন মোহনার মেলায় অভিযোজিত হলো! ড. সফিউদ্দিন আহমদ অধ্যাপক ও গবেষক
শাকুর মজিদ
শাকুর মজিদের জন্ম সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা গ্রামে ১৯৬৫ সালের ২২ নভেম্বর । পিতা মরহুম আব্দুল মজিদ, মা বেগম ফরিদা খাতুন। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিকে ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৯৩ সালে। শৈশবে কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু। পরে গল্প, নাটক, ভ্রমণ-কাহিনি লিখেছেন অনেক। নাটকের সকল শাখায় তাঁর বিচরণ। লন্ডনী কইন্যা, নাইওরী, বৈরাতী, করিমুন নেছা, চেরাগসহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন-নাটক ও টেলিফিলাের রচয়িতা তিনি। বাউল শাহ আবদুল করিমের জীবন ও দর্শন নিয়ে লিখেছেন মঞ্চনাটক ‘মহাজনের নাও'। তাঁর জীবন নিয়ে বানিয়েছেন তথ্যচিত্র “ভাটির পুরুষ। এছাড়াও দেশ-বিদেশের ভ্রমণচিত্র নিয়ে তিন শতাধিক প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছেন। ছবি তুলে, নাটক টেলিফিল্ম ও তথ্যচিত্র বানিয়ে দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। দেশ ভ্রমণ তাঁর একটি বড় নেশা। প্রায় ত্রিশটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ১৫টি ভ্রমণকাহিনি, ৪টি স্মৃতিচারণমূলক ও ১টি গল্পগ্রন্থ। মঞ্চনাটকের আলােকচিত্র নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম আলােকচিত্র-গ্রন্থ ‘রিদম অন দ্যা স্টেজ, স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ ‘মসজিদের ইতিকথা। ব্যক্তিজীবনে শাকুর মজিদ একজন পেশাদার স্থপতি এবং আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক। তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ড. হােসনে আরা জলী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান। দুই সন্তান—ইশমাম ইনতিসার (১৯) ও ইবন ইবতেশাম (১৩)।