হৃদয় নিংড়ানো উত্তাপ আর ভালবাসার নির্যাস ঢেলে কবি বিমল সরকার সৃষ্টি করেছেন কাব্যগ্রন্থ 'অনুভূতির সুবাস' ও 'অস্তিত্বের আমি'। শব্দগুচ্ছ একত্রিত করলেই যে কবিতা হয়--এ কথা সবৈর্ব সত্য নয়। সুপ্রযুক্ত শব্দ সম্ভারের প্রণয়ে গড়ে ওঠে শব্দশরীর। নারীদেহ যত সুন্দরই হোক না কেন অলঙ্কার প্রাচুর্য তাকে আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে। প্রতুলতা আর অপ্রতুলতা জ্ঞান যদি থাকে কবি মনন, অভিধায় তবেই তার তুলির আঁচর যথাযথ হয়। সব রেখার-ই একটি বৃত্তাবদ্ধ রূপ থাকে, যে অবলীলা ক্রমে বৃত্ত ছেদন করে এগিয়ে যায় তাকে কখনো স্থির কখনো দোদুল্যমান অবস্থায় দোলাচল বৃত্তিতে ভুগতে দেখা যায় না। বিমল কুমার সরকার সীমাহীন আকাশ অতিক্রমের চেষ্টা করেনি কখনও। সীমার মাঝে অসীম তুমি এই বিশ্বাস বোধটুকু সামনে রেখে কাব্যের ভুবনে যাতায়াত করেছে।
মা, মাটি, মাতৃভাষা, প্রেম, ভালবাসা, শৈশব, কৈশোর তার স্মৃতিপটে বারবার আঁকিবুঁকি কেটেছে। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে নষ্টালজিয়া দ্বারা আড়ষ্ট হয়নি, বিমুক্ত থেকেছে সেখানে। বিমল সরকার নীল আকাশকে যেমন দেখেছে ঠিক তেমনিভাবে মেঘমেদুর আকাশকেও নিরীক্ষণ করেছে। অতিবর্ষণে বারিপাতের দিনগুলো তাকে ক্লান্ত করেনি। সে গাছে গাছে ফুল ফুটতে দেখেছে খুব কাছ থেকে কারণ সে নৈরাশ্যবাদী নয়; জীবনের মধ্যেই আর এক মহৎ জীবন উপলব্ধির সত্যানুসন্ধানী পথিক সে।
তার এই পথ চলা সুন্দরের। অভিযাত্রিক বিমল সরকার পিচঢালা পথে নয়, সবুজ শ্যামলে ভরা বিশ্ব প্রকৃতির কলঘেঁষে যেমন অতীত স্মৃতি রোমন্থন করেছে তেমনি 'অনুভূতির সুবাস' ও 'অস্তিত্বের আমি' গ্রন্থ দু'টি রচনা করেছে। তার কবিতায় ফুটে উঠেছে সবকিছু স্পষ্টভাবে।