‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ সত্য কল্পকাহিনীর চাইতে আশ্চর্যতরো। এটা আপ্তবাক্য। যে কাহিনীর মূলে সত্যের স্পর্শ নেই, সে কাহিনী মূল্যহীন। আহমদ ছফার দুই খণ্ডে সমাপ্ত আত্মজৈবনিক উপন্যাস অর্ধেক নারী অর্ধেক। ঈশ্বরী একটি অসাধারণ প্রেমের উপন্যাস। নর-নারীর প্রেম হলো সবচাইতে জটিলতম শিল্পকর্ম। প্রেমজ একটি অঙ্গীকার না থাকলে প্রেমের কাহিনী বয়ান করা যায় না। আহমদ ছফা অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী উপন্যাসের প্রথম। খণ্ডটিতে প্রেমজ অঙ্গীকার নিয়েই প্রেমের কথা বলেছেন। লেখক একেকটি নারী চরিত্রকে এমন জীবন্তভাবে উপস্থাপন করেছেন, নারীদের মনোজগতের এমন উন্মোচন ঘটিয়েছেন; গ্রন্থটি পাঠ করলে মনে হবে জীবনের করুণতম অভিজ্ঞতার উৎস থেকেই জন্ম লাভ করেছে এই সমস্ত চরিত্র। প্রেমে পড়ার জন্য যেমন সৎ, একনিষ্ঠ হৃদয়বৃত্তির প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রেম কথা বয়ান করার জন্য আরেক ধরনের নিষ্ঠা এবং সততার। শক্তির সঙ্গে সততার সম্মিলন সচরাচর ঘটে না। আহমদ ছফা এই অনুপম রচনাটিতে সেই আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। মনস্বীতাসম্পন্ন অনেকগুলো উপন্যাস আহমদ ছফার কলম থেকে বেরিয়েছে। নর-নারীর প্রেমকে উপজীব্য করে তাঁর উপন্যাস লেখার এটিই প্রথম প্রয়াস। অসাধারণ লিপি-কুশল লেখকের এই। ধ্রুপদধর্মী উপন্যাসটিতে মানব-মানবীর প্রেম যে, এক নতুনতরো ব্যঞ্জনায় দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। লেখক পরিচিতিঃ আহমদ ছফা জন্ম : ১৯৪৩ সাল গাছবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম. এ গবেষক, বাংলা একাডেমী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, গান, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী মিলিয়ে তিরিশটিরও অধিক গ্রন্থের প্রণেতা। সম্পাদকীয় উপদেষ্টা অধুনালুপ্ত দৈনিক গণকণ্ঠ ও প্রধান সম্পাদক সাপ্তাহিক উত্তরণ। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সভাপতি। একাধিক রচনা একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদ হয়েছে এবং হওয়ার পথে। একাধিক সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোতের । স্মৃতিবিজড়িত কিয়োস্কটি (পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
আহমদ ছফা
আহমদ ছফার জন্ম ১৯৪৩ সালের ৩০ জুন চট্টগ্রাম জেলার চান্দনাইশ থানাধীন গাছবাড়িয়া গ্রামে, এক কৃষিজীবী পরিবারে। বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান। স্কুল ও কলেজের লেখাপড়া যথাক্রমে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন, যদিও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। সমাজবিজ্ঞান নিয়ে কিছুদিন পদ্ধতিগত গবেষনা করেন। কিন্তু অচিরেই তা ছেড়ে দিয়ে মৌলিক রচনা ও চিন্তাচর্চায় আত্মনিবেশ করেন। মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের জন্য সাংবাদিকতা, পত্রিকা প্রকাশ, প্রেস ব্যবসা বা এনজিও কার্যক্রমকে পেশা হিসেবে নিলেও, আজীবন লেখালেখিই ছিল তার মূল কাজ। ছাত্রাবস্থায়ই লিখেছিলেন সিপাহী যুদ্ধের ইতিহাস, যদিও তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই একটি উপন্যাস সূর্য তুমি সাথী। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ-কর্ম, শিশু-কিশাের সাহিত্য ইত্যাদি মিলিয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিরিশের অধিক। তাঁর পুষ্প বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ’ উপন্যাসটি জাপানি ভাষায় ও ‘বস্তি উজার কবিতাটি জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ ছাড়া ওঙ্কার সহ বেশ কিছু লেখা ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ওঙ্কার উপন্যাসটি চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি বেশ কিছু গানও লিখেছেন। গ্যোতের ফাউস্ট কাব্যনাট্যের বঙ্গানুবাদ তাঁর এক অমর কীর্তি। প্রতিষ্ঠানবিরােধী ও প্রতিবাদী বক্তব্যের জন্য আজীবন তিনি ছিলেন আলােচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে। পাশাপাশি নতুন প্রতিভা আবিষ্কার ও তার লালন এবং নবীনদের মধ্যে চিন্তা উসকে দেওয়ার ব্যাপারেও তাঁর জুড়ি ছিল না। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন, যদিও এই সংগঠনের দেওয়া পুরস্কারও তিনি গ্রহণ করেন নি। সমাজের বঞ্চিত শিশুদের জন্য শিল্পী সুলতান পাঠশালা প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম কীর্তি। মৃত্যু : ২০০১ সালের ২৮ শে জুলাই, ঢাকায়।