পথের পাঁচালী
বইঃ পথের পাঁচালী লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশনাঃ অঙ্কুর প্রকাশনী মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০ টাকা নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের ছোট্ট এক কুঁড়ে ঘর। যেখানে একসাথে বাস করেন হরিহর, সর্বজয়া, দুর্গা আর হরিহরের দূর সম্পর্কের বোন ইন্দির ঠাকরুন। ইন্দির ঠাকরুনের বিয়ে হয়েছিল পূর্বদেশীয় এক লোকের সঙ্গে। ইন্দির ঠাকরুনের পাশাপাশি স্থানে স্থানে সে আরো অনেকগুলো বিয়ে করেছিল। ইন্দির ঠাকরুনকে তুলে নিয়ে যায়নি। মাঝেমাঝে এসে দিনকয়েক কাটিয়ে রাহা খরচ আদায় করে অন্য বউয়ের বাপের বাড়ির দিকে রওনা হওয়ায় ছিল তার অভ্যাস। এরই মধ্যে একদিন এক পত্রযোগে তার মৃত্যুর খবর এলে সর্বজয়ার নিজের সংসার পাতার সব সাধ মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। পাশাপাশি হরিহরের বাড়িতে স্থায়ী হয়। হরিহরের নিজের ছিল কষ্টের সংসার। তাই এই অনাবশ্যক উপদ্রব সর্বজয়া সহ্য করতে পারতো না। সর্বজয়ার সাথে ইন্দির ঠাকরুনের লেগেই থাকতো। কিন্তু হরিহরের মেয়ে দুর্গার সাথে ছিল তার খুব ভাব। দুর্গা ইন্দির ঠাকরুনের কাছে গল্প শোনার জন্য, ছড়া শোনার জন্য বায়না করতো। এরইমধ্যে দুর্গার ছোটভাই অপুর জন্ম। অপু ধীরেধীরে বড় হয়ে দুর্গার খেলার সাথী হয়। দুজনে ছুটে বেড়ায় বনে-বাদাড়ে। আম বাগানে, নারিকেল গাছের নীচে সব জায়গায় তাদের অবাদ বিচরণ। দুজনে একদিন রেললাইন দেখার আশায় বাড়ি থেকে অনেকদূর গিয়েও ফিরে আসে। এরমধ্যে দুর্গার খুব জ্বর বাঁধে। একদিন দুর্গা বিছানায় বসে অপুকে বলে, আমি ভালো হয়ে গেলে একদিন আমাকে রেল দেখাতে নিয়ে যাবি? কিন্তু তার রেল দেখা আর হয়না। ম্যালেরিয়ায় তার মৃত্যু হয়। হরিহর বাড়ির বাইরে থাকায় মেয়ের মৃত্যুর খবর পায়না। অনেকদিন পর টাকা সঞ্চয় করে মেয়ের জন্য আলতার পাতা আর ছেলের জন্য বই নিয়ে ফিরে জানে তার মেয়ে পাড়ি জমিয়েছে পরপারে। তাদের সবার জীবন বদলে যায় এভাবে। একদিন হরিহর সিদ্ধান্ত নেন যে নিশ্চিন্দিপুর থেকে সংসার উঠিয়ে কাশি চলে যাবে। কাশি যাওয়ার পথে রেলের কামরা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে অপুর খুব দিদির কথা মনে হয়। কাশি যাওয়ার পর অপুর জীবন সম্পূর্ণরূপে বদলে গেল। ছুটে বেড়ানোর অবাদ স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাড়ালো ইট পাথরের দেয়াল। এভাবে নানা বৈচিত্র্যময়তা আর ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় গল্প। গ্রামীণ জীবনের চমৎকার এক দৃশ্য আছে এই গল্পে। নগরায়ন হয়তো বছরে বছরে গ্রামীণ জীবন গিলে খাবে। কিন্তু "পথের পাঁচালী" শত বছর পরেও জনে জনে বলে বেড়াবে দুর্গা আর অপুর গ্রামীণ অনাবিল আনন্দময় জীবনের উপখ্যান। #বইবাজার_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মার্চ_২০১৯