বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর এককথায় অভাবনীয়। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা ছিল বিরাট এক ধ্বংসস্তুপ। সেখান থেকে ফিনিক্স পাখির মতাে আজকের বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানাের ভঙ্গিটি আসলেই চোখে পড়ার মতাে। সামনের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার এই অজেয় প্রাণশক্তি বাংলাদেশ অর্জন করেছে একাত্তরের সগ্রামী দিনগুলােতে। সে ছিল এক হিরন্ময় সময়। অসংখ্য শহিদের রক্তে, ঘামে লেখা বাঙালির মুক্তির আকাক্ষার বিস্ফোরণ ঘটেছিল একাত্তরে। সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপায়ণের এক কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন জাতির পিতা ও তার সুযােগ্য সহকর্মীবৃন্দ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, হঠাৎ তেলের মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট ও আন্তর্জাতিক নানান চাপে জর্জরিত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যখন ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামাে পুনর্নির্মাণে ব্যস্ত এবং দ্রুত অগ্রসরমান, ঠিক তখনই এল আচমকা এক নিষ্ঠুর আক্রমণ। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশবিরােধী এই অপশক্তি স্বদেশকে উল্টোপথে হাঁটতে বাধ্য করল। দীর্ঘসংগ্রাম শেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ফের সঠিক পথে হাঁটতে শুরু করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। বাঙালির ভাষা, ঐতিহ্য ও ঐক্যবদ্ধ সমাজের ভেতরে যে প্রাণশক্তি লুক্কায়িত ছিল তাকে জাগিয়ে তুলে বাংলাদেশ ফের এগিয়ে চলে উন্নয়নের মহাসড়কে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশকে পেছনে ফেলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের অন্তর্ভুক্তি উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এখন অগ্রগামী প্রেরণাসঞ্চারি এক দেশের নাম। অচিরেই স্বল্পোন্নত দেশের খােলস ছেড়ে উন্নয়নশীল দেশের পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। এই রূপান্তরের সকল শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ।
‘প্রান্তজনের স্বপক্ষে বইটিতে বাংলাদেশের চোখ ধাঁধানাে সেই রূপান্তরের কথাই বলার চেষ্টা করেছি। প্রায় বছর খানিকের বেশি সময় ধরে আমি বাংলাদেশের খ্যাতনামা পত্রিকায় আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের নানান বাঁক ও বৈশিষ্ট্য সহজবােধ্য ভাষায় লিখে চলেছি। নানান পত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব লেখা এক জায়গায় গেঁথে না ফেললে এক সময় হয়তাে সেগুলাে হারিয়েই যাবে। তাই এই আয়ােজন। তাছাড়া সমকালীন আর্থসামাজিক বাস্তবতার এক ধরনের ডকুমেন্টেশনের প্রচেষ্টাও এই আয়ােজনের অন্যতম লক্ষ্য বটে। আমি বরাবরই উন্নয়নকে বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপটে দেখার চেষ্টা করে থাকি। তবে সকল ক্ষেত্রেই প্রান্তজনের প্রতি আমার যে পক্ষপাতিত্ব থাকে তা পাঠকদের আর মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়ােজন নেই।
আতিউর রহমান
অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রচলিত ধারার বাইরের এক উন্নয়ন গবেষক। কর্মজীবীর। স্বাপ্নিক এই পরিশ্রমী লেখক যা বিশ্বাস করেন তাই অপকটে প্রকাশও করেন। সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখবার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও রাজনীতিকে। বহুমাত্রিক বিষয় হিসেবে উন্নয়নকে বাংলা ভাষায় সহজ করে উপস্থাপনের কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। ১৯৮৩ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি প্রাপ্ত ড. আতিউর রহমান স্বদেশেই রয়ে গেছেন। সর্বক্ষণ ব্যস্ত রয়েছেন ব্যতিক্রমী গবেষণায়, গণমাধ্যমে, জনবিতর্কে, সাধারণের ভাষায় লেখালেখিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান বর্তমানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি সিডিএফ-এর সভাপতি, মোনাজাতউদ্দীন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এবং বিশ্বসাহিত্য-কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাস্টি। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিনি সাবেক চেয়ারম্যান। বিআইডিএস-এর একজন সাবেক উর্ধ্বতন গবেষক ড. রহমানের অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে দেশের ও বিদেশের নামকরা প্রকাশনা সংস্থা থেকে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘ভাষা আন্দোলন আর্থ-সামাজিক পটভূমি মুক্তিযুদ্ধের তিনটি বই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধের মানুষ অসহযোগের দিনগুলি রবীন্দ্র-অমর্ত্য ভাবনা উন্নয়ন আলাপ জনগণের বাজেট আলো আঁধারের বাংলাদেশ সুশাসনের সন্ধানে অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন উন্নয়ন কার জন্য অপউন্নয়ন স্বপ্নের বাংলাদেশ খুঁজে ফেরা Peasants and classes Education for Development’ ইত্যাদি। দেশি ও বিদেশি প্রফেশনাল জার্নালে তাঁর বিপুল সংখ্যক গবেষণা-প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। সব মিলে তিরিশটিরও বেশি বইয়ের লেখক ড. রহমান।
Title :
প্রান্তজনের স্বপক্ষে : বাংলাদেশের সমকালীন আর্থসামাজিক উন্নয়নভাবনা