১৭ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এদিন তিনি মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন। কেবল একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে নয়, জাতীয় রাজনীতির হাল ধরতে, সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে। দেশের মাটিতে পা রাখার দিন থেকেই শুরু হয় তার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামী জীবন, সাড়ে তিন দশকের অধিক সময় ধরে যা বিস্তৃত। শেখ হাসিনা রাষ্ট্র, সমাজ, দেশ, বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তাধারার উত্তরাধিকার আমাদের জন্য প্রতি মুহূর্তে রেখে চলেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফিরে না। এলে ক্ষমতার মদমত্ততার ও আত্মম্ভরিতার অবসান হতাে না। এ কথা মােটেই বাড়িয়ে বলা হবে না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নির্মীয়মাণ ইতিহাসে শেখ হাসিনা নিজের জায়গা নিজে করে নিয়েছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছিলেন, শেখ হাসিনা যখনই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছিলেন তখনই বুঝে নিয়েছিলেন দুর্গম গিরি কান্তার মরু পথ। তার পথে পথে পাথর ছড়ানাে ছিল। শুধু পাথর নয়; এক পর্যায়ে দেখা গেল ‘পথে পথে গ্রেনেড ছড়ানাে। শেখ হাসিনা জেনে গিয়েছিলেন, চলার পথে অনেক বাঁক থাকে, চোরাস্রোত থাকে, অনির্দিষ্ট আর অলক্ষ অনেক উপাদানে জড়িয়ে থাকে ইতিহাসের অনির্ধারিত গতিপথে। অথচ শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭ বছর অতিক্রমের পর প্রশ্ন থেকে যায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন?
শেখ হাসিনার আরেকটি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ২০০৭ সালের ৭ মে। ওই বছর ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ পুত্রবধূকে দেখতে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। তারপর থেকে দেশের ভিতরে উচ্চাভিলাষী চক্র তাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। প্রথমে জনৈক ঠিকাদারকে বাগে এনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় চাঁদাবাজি মামলা। এফআইআর-এ নাম না থাকা সত্ত্বেও ঘাতক জামাত-শিবিরের দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। চাঁদাবাজির সাজানাে মামলাটি দায়ের করা হয় ৯ এপ্রিল। মিথ্যা মামলাটি আইনগতভাবে মােকাবিলার জন্য তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রেসনােট ইস্যু করার পর শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন। সেদিন রাতে তার বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে দেশে দেশের কোনাে টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়নি। সরকার তার ওপর নিষেধাজ্ঞার খবরটি বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সব এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়। বিমান ও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এদিকে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ঘােষণা করার পর যােগাযােগ উপদেষ্টা জেনারেল মতিন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুভাষ সিংহ রায়
সুভাষ সিংহ রায়, জন্ম ১৯৬৬ সালে, যশাের জেলায়, বিখ্যাত সিংহ রায় পরিবারে। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বাগ্মিতা তার রক্তে। পেশায় ওষুধ বিজ্ঞানী, প্রবলভাবে রাজনীতি করেন, এক সময় তুখাের ছাত্রনেতা ছিলেন। লিখতে শুরু করেছেন বেশ আগে থেকেই, কলামিস্ট নানা পত্রিকায়। বাংলাদেশের বিতর্ক চর্চায় যে ক'জন নতুন ধারা সূচনা করেন সুভাষ অবশ্যই তাদের অন্যতম। সুভাষ আপদমস্তক প্রগতিশীল, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, যিনি ইস্পাতকে ইস্পাতই বলেন। সমাজ ও মানুষকে তিনি বিশ্লেষণ করেন পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে। খাপখােলা ধারালাে তলােয়ারের মতাে শাণিত শব্দাবলি, সত্য তবে বিদ্ধ করে হৃদয়। নির্ভয় উক্তি তার, এ জন্য তিনি লেখক হিসেবে একেবারেই অন্যরকম।
Title :
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন (হার্ডকভার)