সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের একটি সিরিজ প্রকাশনা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আখ্যায়িকার শুরু, এ-কথা বলা যায়। ১৮৫৪ সালে তিনি কবি কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের উপাখ্যানভাগ বাংলায় পরিবেশন করেন। এরপর প্রায় শতবর্ষ ধরে বাংলা কথাসাহিত্যের যে-বিকাশ তার শীর্ষস্থানীয় গ্রন্থগুলেকে পাঠকের কাছে একত্রে তুলে দেওয়ার আকাক্সক্ষা নিয়েই সিরিজটি পরিকল্পিত হয়েছে। সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের কাছে সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালার ২৪টি বই একসঙ্গে পাওয়া অত্যন্ত খুশির বিষয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আগামীতেও এরকম কিছু গ্রন্থ পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারবো বলে আমরা আশা রাখি।
তারকনাহা গঙ্গোপাধ্যায়
তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৪৩-৯১) ছিলেন পেশায় চিকিৎসক, সরকারি কর্মসূত্রে জীবনের অনেকটা সময় তিনি উত্তরবঙ্গে কাটিয়েছিলেন, মিশেছিলেন নানাধরনের লোকের সঙ্গে। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতাই তাঁকে কথাসাহিত্য-রচনায় প্রেরণা দিয়েছিল বলে মনে হয়। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্বর্ণলতা (১৮৭৪) প্রথমে রাজশাহী-বোয়ালিয়া থেকে প্রকাশিত ও শ্রীকৃষ্ণ দা-সম্পাদিত জ্ঞানাঙ্কুর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে (১৮৭২-৭৩) প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় ও গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময়ে তো বটেই, তিন সংস্করণ পর্যন্ত স্বর্ণলতায় লেখকের নাম ছিল না। হয়তো পাঠকেরা উপন্যাসটিকে কীভাবে গ্রহণ করবেন, সে-বিষয়ে লেখকের মনে সন্দেহ ছিল। রচয়িতার নামের অভাবে অনেকে একে ইন্দ্রনাথ বন্দ্র্যোপাধ্যায়ের রচনা বলে নির্ণয় করেছিলেন, অন্য কেউ কেউ নাকি নিজেকেই গ্রন্থকার বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। স্বর্ণলতার চতুর্থ সংস্করণে রচয়িতাকে লেখা ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি পত্র মুদ্রিত হয়, তাতেই লেখকের নাম প্রথমে উদ্ঘাটিত হয়। বঙ্গিমচন্দ্রের ইতিহাসাশ্রিত রোমান্স যখন বাঙালি পাঠকের চিত্তজয় করেছে, তখন চিরকালীন বাঙালি গ্রাম্য সমাজের বহুলপরিমাণে বর্ণহীন চিত্র নিয়ে তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে দেখা দিলেন। বিষবৃক্ষে (১৮৭৩) বঙ্কিমচন্দ্র সামাজিক উপন্যাসরচনার নতুন পথ দেখিয়েছিলেন, সত্য, কিন্তু বিষবৃক্ষের কাহিনি প্রাত্যহিক জীবনের কাহিনি নয়।
আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালে কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় বি এ অনার্স, এম এ ও পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতা করেন দু-দফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৫৯-৬৯ ও ১৯৮৫-২০০৩) এবং মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসর নেওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ছিলেন, এখন এমেরিটাস অধ্যাপক।
তিনি শিকাগাে বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট-ডক্টরাল। ফেলাে এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমিক স্টাফ ফেলাে ছিলেন। পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পে। কলকাতার মওলানা আবুল কালাম আজাদ। ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ, প্যারিস। বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারােলাইন স্টেট। ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলাে ছিলেন, বিশ্বভারতীতে ছিলেন ভিজিটিং প্রফেসর।
. বাংলা ও ইংরেজিতে তার অনেকগুলি বই। ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন ও টোকিওতে প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে তাঁর রচিত মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র, স্বরূপের সন্ধানে, পুরােনাে বাংলা গদ্য, বাঙালি। নারী সাহিত্যে ও সমাজে, তাঁর স্মৃতিকথা কাল নিরবধি ও আমার একাত্তর, Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office Library and Records, Creativity, Reality and Identity, Cultural Pluralism, Identity, Religion and Recent Hisotry এবং তাঁর সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড) বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি গবেষণায় বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার, শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রচারে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে। সরােজিনী বসু পদক, রবীন্দ্রভারতী দিয়েছে। সাম্মানিক ডি. লিট।